বিশ্বাস ও আশা , proggapath, progga, bangla literature, bangla kobita, bangla golpo, babgla story, romantic golpo, কাজী নজরুল ইসলাম, Kazi Nazrul Islam, bisshas o asha

বিশ্বাস ও আশা

০ মন্তব্য দর্শক

বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেয়ো না তাহার কাছে
নড়াচড়া করে, তবুও সে মড়া, জ্যান্তে সে মরিয়াছে।
শয়তান তারে শেষ করিয়াছে, ইমান লয়েছে কেড়ে,
পরাণ গিয়াছে মৃত্যুপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে ।

থাকুক অভাব দারিদ্র্য ঋণ রোগ শোক লাঞ্ছনা,
যুদ্ধ না ক’রে তাহাদের সাথে নিরাশায় মরিও না ।
ভিতরে শত্রু ভয়ের ভ্রান্তি মিথ্যা ও অহেতুক
নিরাশায় হয় পরাজয় যার তাহার নিত্য দুখ ।

“হয়ত কী হবে” এই ভেবে যারা ঘরে ব’সে কাঁপে ভয়ে,
জীবনের রণে নিত্য তারাই আছে পরাজিত হয়ে।
তারাই বন্দী হয়ে আছে গ্লানি অধীনতা কারাগারে ;
তারাই নিত্য জ্বালায় পিত্ত অসহায় অবিচারে !

এরা অকারণ ভয়ে ভীত, এরা দুর্ব্বল নির্ব্বোধ,
ইহাদের দেখে দুঃখের চেয়ে জাগে মনে বেশী ক্রোধ।
এরা নির্ব্বোধ, না ক’রে কিছুই জিভ মেলে প’ড়ে আছে,
গোরস্তানেও ফুল ফোটে, ফুল ফোটে না এ মরা গাছে ।

এদের মুক্তি অদৃষ্টবাদ, ব’সে ব’সে ভাবে একা,
‘এ মোর নিয়তি’ বলানো নাহি যায় কপালের লেখা !
পৌরুষ এরা মানে না, নিজেরে দেয় শুধু ধিক্কার,
দুর্ভাগ্যের সাথে নাহি লড়ে মেনেছে ইহারা হার।

এরা জড়, এরা ব্যাধিগ্রস্ত, মিশো না এদের সাথে,
মৃত্যুর উচ্ছিষ্ট আবর্জ্জনা এরা দুনিয়াতে।
এদের ভিতরে ব্যাধি, ইহাদের দশদিক তমোময়,
চোখ বুজে থাকে, আলো দেখিয়াও বলে, ‘ইহা আলো নয় ।’

প্রবল অটল বিশ্বাস যার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে,
যৌবন আর জীবনের ঢেউ কল-তরঙ্গে আসে,
মরা মৃত্তিকা করে প্রাণায়িত শস্যে কুসুমে ফলে,
কোনো বাধা তার রুধে না ক পথ, কেবল সুমুখে চলে ।

চির-নির্ভয়, পরাজয় তার জয়ের স্বর্গ-সিঁড়ি,
আশার আলোক দেখে তত, যত আসে দুৰ্দ্দিন ঘিরি’।
সেই পাইয়াছে পরম আশার আলো, যেয়ো তারি কাছে,
তাহারি নিকটে মৃত্যুঞ্জয়ী অভয়-কবচ আছে ।

যারা বৃহতের কল্পনা করে, মহৎ স্বপ্ন দেখে,
তারাই মহৎ কল্যাণ এই ধরায় এনেছে ডেকে ।
অসম্ভবের অভিযান-পথ তারাই দেখায় নরে,
সর্ব্বসৃষ্টি ফেরেস্তারেও তারা বশীভূত করে ।

আত্মা থাকিতে দেহে যারা সহে আত্ম-নির্যাতন,
নির্যাতকেরে বধিতে যাহারা করে না পরাণ-পণ,
তাহারা বদ্ধ জীব পশু সম, তাহারা মানুষ নয়,
তাদেরই নিরাশা মানুষের আশা ভরসা করিছে লয় ।

হাত-পা পাইয়া কৰ্ম্ম করে না কুর্ম্ম-ধর্মী হয়ে,
রহে কাদা-জলে মুখ লুকাইয়া আঁধার বিবরে ভয়ে,
তাহারা মানব-ধর্ম্ম ত্যজিয়া জড়ের ধর্ম্ম লয়,
তাহারা গোরস্তান শ্মশানের, আমাদের কেহ নয় ।

আমি বলি, শোনো মানুষ ! পূর্ণ হওয়ার সাধনা করো,
দেখিবে তাহারি প্রতাপে বিশ্ব কাঁপিতেছে থরোথরো !
ইহা আল্লার বাণী যে, মানুষ যাহা চায় তাহা পায়,
এই মানুষের হাত পা চক্ষু আল্লার হয়ে যায় !

চাওয়া যদি হয় বৃহৎ, বৃহৎ সাধনাও তার হয়,
তাহারি দুয়ারে প্রতীক্ষা করে নিত্য সৰ্ব্বজয় ।
অধৈর্য নাহি আসে কোনো মহাবিপদে সে সেনানীর,
অটল শান্ত সমাহিত সেই অগ্রনায়ক বীর ।

নিরানন্দের মাঝে আল্লার আনন্দ সেই আনে,
চাঁদের মতন তার প্রেম জনগণ-সমুদ্রে টানে ।
অসম সাহস বুকে তার আসে অভয় সঙ্গ ক’রে,
নিত্য জয়ের পথে চলো সেই পথিকের হাত ধরে।

পূর্ণ পরম বিশ্বাসী হও, যাহা চাও পাবে তাই ;
তাহারে ছুঁয়ো না, সেই মরিয়াছে, বিশ্বাস যার নাই !

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত

বিশ্বাস ও আশা

দর্শক

বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেয়ো না তাহার কাছে
নড়াচড়া করে, তবুও সে মড়া, জ্যান্তে সে মরিয়াছে।
শয়তান তারে শেষ করিয়াছে, ইমান লয়েছে কেড়ে,
পরাণ গিয়াছে মৃত্যুপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে ।

থাকুক অভাব দারিদ্র্য ঋণ রোগ শোক লাঞ্ছনা,
যুদ্ধ না ক’রে তাহাদের সাথে নিরাশায় মরিও না ।
ভিতরে শত্রু ভয়ের ভ্রান্তি মিথ্যা ও অহেতুক
নিরাশায় হয় পরাজয় যার তাহার নিত্য দুখ ।

“হয়ত কী হবে” এই ভেবে যারা ঘরে ব’সে কাঁপে ভয়ে,
জীবনের রণে নিত্য তারাই আছে পরাজিত হয়ে।
তারাই বন্দী হয়ে আছে গ্লানি অধীনতা কারাগারে ;
তারাই নিত্য জ্বালায় পিত্ত অসহায় অবিচারে !

এরা অকারণ ভয়ে ভীত, এরা দুর্ব্বল নির্ব্বোধ,
ইহাদের দেখে দুঃখের চেয়ে জাগে মনে বেশী ক্রোধ।
এরা নির্ব্বোধ, না ক’রে কিছুই জিভ মেলে প’ড়ে আছে,
গোরস্তানেও ফুল ফোটে, ফুল ফোটে না এ মরা গাছে ।

এদের মুক্তি অদৃষ্টবাদ, ব’সে ব’সে ভাবে একা,
‘এ মোর নিয়তি’ বলানো নাহি যায় কপালের লেখা !
পৌরুষ এরা মানে না, নিজেরে দেয় শুধু ধিক্কার,
দুর্ভাগ্যের সাথে নাহি লড়ে মেনেছে ইহারা হার।

এরা জড়, এরা ব্যাধিগ্রস্ত, মিশো না এদের সাথে,
মৃত্যুর উচ্ছিষ্ট আবর্জ্জনা এরা দুনিয়াতে।
এদের ভিতরে ব্যাধি, ইহাদের দশদিক তমোময়,
চোখ বুজে থাকে, আলো দেখিয়াও বলে, ‘ইহা আলো নয় ।’

প্রবল অটল বিশ্বাস যার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে,
যৌবন আর জীবনের ঢেউ কল-তরঙ্গে আসে,
মরা মৃত্তিকা করে প্রাণায়িত শস্যে কুসুমে ফলে,
কোনো বাধা তার রুধে না ক পথ, কেবল সুমুখে চলে ।

চির-নির্ভয়, পরাজয় তার জয়ের স্বর্গ-সিঁড়ি,
আশার আলোক দেখে তত, যত আসে দুৰ্দ্দিন ঘিরি’।
সেই পাইয়াছে পরম আশার আলো, যেয়ো তারি কাছে,
তাহারি নিকটে মৃত্যুঞ্জয়ী অভয়-কবচ আছে ।

যারা বৃহতের কল্পনা করে, মহৎ স্বপ্ন দেখে,
তারাই মহৎ কল্যাণ এই ধরায় এনেছে ডেকে ।
অসম্ভবের অভিযান-পথ তারাই দেখায় নরে,
সর্ব্বসৃষ্টি ফেরেস্তারেও তারা বশীভূত করে ।

আত্মা থাকিতে দেহে যারা সহে আত্ম-নির্যাতন,
নির্যাতকেরে বধিতে যাহারা করে না পরাণ-পণ,
তাহারা বদ্ধ জীব পশু সম, তাহারা মানুষ নয়,
তাদেরই নিরাশা মানুষের আশা ভরসা করিছে লয় ।

হাত-পা পাইয়া কৰ্ম্ম করে না কুর্ম্ম-ধর্মী হয়ে,
রহে কাদা-জলে মুখ লুকাইয়া আঁধার বিবরে ভয়ে,
তাহারা মানব-ধর্ম্ম ত্যজিয়া জড়ের ধর্ম্ম লয়,
তাহারা গোরস্তান শ্মশানের, আমাদের কেহ নয় ।

আমি বলি, শোনো মানুষ ! পূর্ণ হওয়ার সাধনা করো,
দেখিবে তাহারি প্রতাপে বিশ্ব কাঁপিতেছে থরোথরো !
ইহা আল্লার বাণী যে, মানুষ যাহা চায় তাহা পায়,
এই মানুষের হাত পা চক্ষু আল্লার হয়ে যায় !

চাওয়া যদি হয় বৃহৎ, বৃহৎ সাধনাও তার হয়,
তাহারি দুয়ারে প্রতীক্ষা করে নিত্য সৰ্ব্বজয় ।
অধৈর্য নাহি আসে কোনো মহাবিপদে সে সেনানীর,
অটল শান্ত সমাহিত সেই অগ্রনায়ক বীর ।

নিরানন্দের মাঝে আল্লার আনন্দ সেই আনে,
চাঁদের মতন তার প্রেম জনগণ-সমুদ্রে টানে ।
অসম সাহস বুকে তার আসে অভয় সঙ্গ ক’রে,
নিত্য জয়ের পথে চলো সেই পথিকের হাত ধরে।

পূর্ণ পরম বিশ্বাসী হও, যাহা চাও পাবে তাই ;
তাহারে ছুঁয়ো না, সেই মরিয়াছে, বিশ্বাস যার নাই !

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত