মধুর প্রভাতে আজি অরুণ কিরণে এস নামি’
হে বসন্ত ঋতুকুলস্বামী !
উজলি’ কিরীটালোকে অন্ধকার এ বিশ্বের সীমা,
কাননে, পুষ্পিত কুঞ্জে জাগাইয়া সৌরভ-মহিমা ;
নন্দনের আলোক-গরিমা, মন্দাকিনী-কলগান
ফুটাইয়া, জাগাইয়া এস তুমি মধুর মহান্ !
নিশি অবসান ।
প্রভাত-আলোকে মধুর মন্থর গতি
এস ঋতুপতি !
সঙ্গীত সুরভিময় এস তুমি অমরার দ্যুতি
হে বসন্ত নবীন অতিথি !
ঝলকিছে দিনমণি ওই দূর পূরব দিগন্তে,
স্বর্ণ-মুখী হাস্যময়ী ওই ঊষারাণী; নিঠুর হেমন্তে
আছিল বিবশ জড়, শিশিরের শীতল সিঞ্চনে
জাগরিত আলোক-পুলকে আজি তব আবাহনে।
বিরহের অবসানে
নব ছন্দে, বর্ণ-গন্ধে আনন্দ-সঙ্গীতে
এস এ প্রভাতে।
সুদূরের স্বপ্নসখা—স্বরগের সদানন্দ দূত
হে বসন্ত কল্পনার সূত !
মুকুলিত তব আশে তরুপুঞ্জ কানন-বল্লরী ;
কিশলয়-শ্যামা ধরা, সহকারে নবীন মঞ্জরী ;
বিশ্বের ব্যথিত বুকে জাগিয়াছে দীর্ঘ বর্ষ-পরে
পুলকের মধু-শিহরণ; অলক্ষ্য সমীর-ভরে
দূর দূরান্তরে
ভেসে যায় লোকান্তের কল্পকুঞ্জ-গীতি
পূৰ্ণ মধু-প্রীতি ৷
আলোক-তটিনী-কুলে গন্ধময়ী কোথা স্বর্ণ-ভূমি,
হে বসন্ত কোথা ছিলে তুমি—
নিদ্রিত শান্তির কোলে, অলস শিথিল স্বর্ণ -তনু
হেলাইয়া কল্পতরুমূলে ? পুষ্পময় শরধনু-
করে জাগ্রত প্রহরী-রূপে আছিল কি তব পাশে
অনঙ্গ কন্দর্প-সখা, সমীরণ সুনীরব ভাষে
পারিজাত-বাসে
আমোদিয়া বনস্থল গেয়েছিল গান
মোহি’ মন প্রাণ ?
দীপিছে রঞ্জিত বিভা ধরণীর আলোক-শিখরে
হে বসন্ত আজি তব তরে ।
প্রস্ফুটিত শত পুষ্পে এ বিশ্বের বিচিত্র উদ্যানে
ল’য়ে মধু কলগান স্বর্ণ পিক-মিষ্ট কুহরণে
এস নামি’ হে সুন্দর দ্যুলোকের আনন্দ-মূরতি
জ্যোতির্লেখা ভূলোকে ছড়া’য়ে; কনক অঞ্চল পাসি
নমিতা প্রকৃতি
তোমারে বরিয়া লবে কুসুমিত বনে
উল্লসিত মনে ৷
চিত্রিত এ মঙ্গল উযায় পূরবের অরুণিমা কোলে
হে বসন্ত এস কুতূহলে-
কিরণ-পালক তুলি’ বিরঞ্জিত আলোক বিমানে ।
আবাহন ছাপা’য়ে উঠুক উচ্চে গগনে পবনে।
সে আলোকে, সে সঙ্গীতে অবসাদ জড়তা দূরিয়া
বিশ্ব জাগরণ সাথে শুভক্ষণে আলস্য তাজিয়া
উঠুক জাগিয়া
জাতির কল্যাণ পুন দীর্ঘ বর্ষ-পরে
নব দীপ্তি ধ’রে।