অন্তর চন্দ্র, Antor Chandro, proggapath, progga, bangla literature, bangla kobita, bangla golpo, babgla story, romantic golpo, প্রজ্ঞাপাঠ, সাতরঙ, satrang, একটি খোলা চিঠি, akti khola chithi

একটি খোলা চিঠি

০ মন্তব্য দর্শক

যারা সময়কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছো কাঁধে করে শ্মশানের পথে— তারা কি আমায় ভুলে গেছ?… একা একা আমি আর কতকাল সংসারীবীজ বুনবো, হাঁড়িতে রান্না চাপাবো, এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল ধুবো— একজন অনাত্মীয় নেই; যার জন্য লিখছি সে নির্বিকার। সোনার কাঠি, রুপার কাঠি ছুঁড়ে দেখো —এই মরু হৃদয়ে এতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই; একা থাকলে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে! অথচ আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি, শেষ হয়ে যাচ্ছি, কেউ থেকেও নেই, মা-বাবা, ভাই-বোন এসবে কি আসে যায়! কেউ তো আমার দুঃখকে পুষে রাখে না— হৃদয় থেকে হৃদয়ের কাছে; এতটুকু নষ্ট হলে বাঁধা দেওয়ায় কেউ নেই, দূরে থেকে দৃষ্টিপাত করলে সব‌ই ঝাঁপসা দেখায়, দশটি বছর কাটলো হৃদয়ে লাভার উদ্গিরণ, এখন আর‌ও তীক্ষ্ণ হয়েছে কালযাপন। যাদের জীবনে মধুমাস আসে তারা কি জানে, আমি জানি না! অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার বদভ্যাস ছাড়তে পারি না, গাছপালা, নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত আমাকে টেনে ছিঁড়ে খাচ্ছে, আমি অবলীলায় আমাকে বিলিয়ে দিচ্ছি, কি দারুণ শিল্পকর্ম তুমি দেখতে পাচ্ছ আমার ভিতর! ভালো করে দেখ, চোখে চোখ রাখতে পারি না আমি, বছরখানেক আগে তুমি হাওয়ার মতো ঝাপটা দিয়ে কোথায় যে মিলিয়ে গেলে— তারপর থেকে একটা চাপা গোলাপ জড়িয়ে বসে আছি, তুমি নেই, একদিন দেখাও হলো না, কথাও হয়নি, তবুও কেন যে ভালোবাসা বলি? বুঝতে পারি না, উকিল মুন্সীর গান শোনা আমি কবেই ছেঁড়ে দিয়েছি, আবুল হাসানের কবিতা, সেসব তোমাকে জানানো হয়নি। এখন আমি বিখ্যাত ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের ছোটভাই পান্নালালের গান শুনি, সব্যসাচীর কন্ঠকে শুনি, নজরুলের গান ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই, তারে কেন মনে রাখো—’ কেন মনে রাখি? বুঝতে পারি না।

প্রতিরাতে আকাশের নক্ষত্রেরা আমাকে স্বপ্নের ভেতর ডেকে তোলে— আমি ঘুমোতে গেলে সমস্ত কবিতারা জাপটে ধরে আঁচড়ে পড়ে বুকের উপর মাঝেমধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে যায়; তোকেও জানাতে ভুলে গেছি বন্ধু, আমার বেঁচে থাকার ইতিহাসে এইসব দিনরাত্রি আমি তো নিজ হাতে গড়ে তুলি নাই, কি চাই আমি?… হেঁট মাথা করে চলে যাই, লাফ দেই শূন্যের শরীরে, ভিতরে-বাহিরে বেমালুম আমার বেঁচে থাকার ইতিহাসে একটুকরো সুখ অবশিষ্ট নেই; এখন সময় এসেছে কবিতার কাছে সমস্ত কিছু বলবার অথচ তুমি আমার কবিতা ভালোবাসো না, সময়, তুমি কি রোদ্দুরে টেনে নেবে সমস্ত ভালোবাসা! আমি রান্নার চুলো হতে আমাকে নামাবো মাটির শরীরে, শীতের চাদরে, চৈত্রের দুপুরে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে নিবিড় আলাপ হবে।

প্রকৃতি আমাকে গিলে খাচ্ছে— সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামালো না, দেশে দেশে যুদ্ধ, রক্তপাত, হিংসা-নিন্দা, বাতাসে কান্নার রেওয়াজ অথচ আমি কবিতার খাতা অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছি; আমার দ্বিতীয় কেউ নেই, যাকে চিঠি লিখে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে পারি, বন্ধুত্বেও বিশ্বাস নেই, কিন্তু কাকে যে লিখছি আমার অবদমিত ভাবনার কোলাহল বুঝতে পারি না। এবছরের শেষে পড়লাম রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ’ ব‌ইটি, ব‌ই ছাড়া শান্তনা দেবার মতো অতি লৌকিক মানুষ তো নেই; তাই সময়কে ব্যাবহার করছি, সময় আমাকে আর তোমরা যারা সময়কে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছো তোমাদেরকেই লিখছি, যারা নিপুণ হাতের কারিগর, তোমরা দুঃখগুলো পুষে রেখো— একদিন একটা দুঃখের পৃথিবী গড়ে আমরা আলাদা হয়ে যাব।

চিলমারী, কুড়িগ্রাম
১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত

একটি খোলা চিঠি

দর্শক

যারা সময়কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছো কাঁধে করে শ্মশানের পথে— তারা কি আমায় ভুলে গেছ?… একা একা আমি আর কতকাল সংসারীবীজ বুনবো, হাঁড়িতে রান্না চাপাবো, এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল ধুবো— একজন অনাত্মীয় নেই; যার জন্য লিখছি সে নির্বিকার। সোনার কাঠি, রুপার কাঠি ছুঁড়ে দেখো —এই মরু হৃদয়ে এতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই; একা থাকলে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে! অথচ আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি, শেষ হয়ে যাচ্ছি, কেউ থেকেও নেই, মা-বাবা, ভাই-বোন এসবে কি আসে যায়! কেউ তো আমার দুঃখকে পুষে রাখে না— হৃদয় থেকে হৃদয়ের কাছে; এতটুকু নষ্ট হলে বাঁধা দেওয়ায় কেউ নেই, দূরে থেকে দৃষ্টিপাত করলে সব‌ই ঝাঁপসা দেখায়, দশটি বছর কাটলো হৃদয়ে লাভার উদ্গিরণ, এখন আর‌ও তীক্ষ্ণ হয়েছে কালযাপন। যাদের জীবনে মধুমাস আসে তারা কি জানে, আমি জানি না! অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার বদভ্যাস ছাড়তে পারি না, গাছপালা, নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত আমাকে টেনে ছিঁড়ে খাচ্ছে, আমি অবলীলায় আমাকে বিলিয়ে দিচ্ছি, কি দারুণ শিল্পকর্ম তুমি দেখতে পাচ্ছ আমার ভিতর! ভালো করে দেখ, চোখে চোখ রাখতে পারি না আমি, বছরখানেক আগে তুমি হাওয়ার মতো ঝাপটা দিয়ে কোথায় যে মিলিয়ে গেলে— তারপর থেকে একটা চাপা গোলাপ জড়িয়ে বসে আছি, তুমি নেই, একদিন দেখাও হলো না, কথাও হয়নি, তবুও কেন যে ভালোবাসা বলি? বুঝতে পারি না, উকিল মুন্সীর গান শোনা আমি কবেই ছেঁড়ে দিয়েছি, আবুল হাসানের কবিতা, সেসব তোমাকে জানানো হয়নি। এখন আমি বিখ্যাত ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের ছোটভাই পান্নালালের গান শুনি, সব্যসাচীর কন্ঠকে শুনি, নজরুলের গান ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই, তারে কেন মনে রাখো—’ কেন মনে রাখি? বুঝতে পারি না।

প্রতিরাতে আকাশের নক্ষত্রেরা আমাকে স্বপ্নের ভেতর ডেকে তোলে— আমি ঘুমোতে গেলে সমস্ত কবিতারা জাপটে ধরে আঁচড়ে পড়ে বুকের উপর মাঝেমধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে যায়; তোকেও জানাতে ভুলে গেছি বন্ধু, আমার বেঁচে থাকার ইতিহাসে এইসব দিনরাত্রি আমি তো নিজ হাতে গড়ে তুলি নাই, কি চাই আমি?… হেঁট মাথা করে চলে যাই, লাফ দেই শূন্যের শরীরে, ভিতরে-বাহিরে বেমালুম আমার বেঁচে থাকার ইতিহাসে একটুকরো সুখ অবশিষ্ট নেই; এখন সময় এসেছে কবিতার কাছে সমস্ত কিছু বলবার অথচ তুমি আমার কবিতা ভালোবাসো না, সময়, তুমি কি রোদ্দুরে টেনে নেবে সমস্ত ভালোবাসা! আমি রান্নার চুলো হতে আমাকে নামাবো মাটির শরীরে, শীতের চাদরে, চৈত্রের দুপুরে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে নিবিড় আলাপ হবে।

প্রকৃতি আমাকে গিলে খাচ্ছে— সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামালো না, দেশে দেশে যুদ্ধ, রক্তপাত, হিংসা-নিন্দা, বাতাসে কান্নার রেওয়াজ অথচ আমি কবিতার খাতা অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছি; আমার দ্বিতীয় কেউ নেই, যাকে চিঠি লিখে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে পারি, বন্ধুত্বেও বিশ্বাস নেই, কিন্তু কাকে যে লিখছি আমার অবদমিত ভাবনার কোলাহল বুঝতে পারি না। এবছরের শেষে পড়লাম রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ’ ব‌ইটি, ব‌ই ছাড়া শান্তনা দেবার মতো অতি লৌকিক মানুষ তো নেই; তাই সময়কে ব্যাবহার করছি, সময় আমাকে আর তোমরা যারা সময়কে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছো তোমাদেরকেই লিখছি, যারা নিপুণ হাতের কারিগর, তোমরা দুঃখগুলো পুষে রেখো— একদিন একটা দুঃখের পৃথিবী গড়ে আমরা আলাদা হয়ে যাব।

চিলমারী, কুড়িগ্রাম
১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত