proggapath, progga, bangla literature, bangla kobita, bangla golpo, babgla story, romantic golpo, প্রজ্ঞাপাঠ, বাংলা সাহিত্য, কবিতা, বাংলা কবিতা, প্রজ্ঞা, গল্প, বাংলা গল্প, রহস্য গল্প, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, শিল্প-সাহিত্য, নাটক, চিঠি, poem, Story, golpo, bangla poem, bangla Story, Rahasya golpo, Rommo Rocona, Articles, Prabandha, Novel, Upanyas, Drama, Natok, Letter, Cithi, Art and literature, silpo-sahityo, বুদ্ধদেব গুহ, buddhadeb guha, সবিনয় নিবেদন, sobinoy nibedon, পত্রোপন্যাস, patropanyas,

সবিনয় নিবেদন

০ মন্তব্য দর্শক

চতুর্থ অঙ্কন :

ডালটনগঞ্জ, পালাম, বিহার
১৩/১১/৮৭

সুচরিতাসু
মহুয়াডাঁর এবং মারুমারে কাজ ছিলো। আজই সন্ধ্যেবেলা ফিরে আপনার চিঠি পেলাম । তাই প্রাপ্তিসংবাদ জানাচ্ছি, জামাকাপড় না খুলেই, যাতে কাল সকালের বাসেই চিঠিটি যায়।
আপনার কাকার কার্ডটি সত্যিই হারিয়ে ফেলেছি। আমি বড় ভুলোমনের মানুষ । তাছাড়া, আমার নিজের কাছে যা-কিছুই নামী বা প্রয়োজনীয় নয় সেই সব তথ্যে ভারাক্রান্ত করতে চাইও না নিজেকে । তাছাড়া আপনার কাকার ঠিকানার মতো ঠিকানা, এখানে বেড়াতে আসা ভদ্রলোকদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন দিয়ে যান, আমাকে প্রতি সপ্তাহে। জানি তো যে কারো সঙ্গেই দেখা হবে না আর। ট্রেনের কামরার আর ট্যুরিস্ট স্পটের আলাপ আইসক্রিমের ঠোঙা বা পাঁউরুটির মোড়া কাগজেরই মতো কামড়াতে বা পথেই পড়ে থাকে। তাই ওসব ঠিকানা রেখে লাভ কি ? ফিরে গিয়ে কেউ মনে রাখে না আবার যদি না ভবিষ্যতে কখনও প্রয়োজন ঘটে। এই প্রেক্ষিতে আপনার ব্যাতিক্রমী চিঠি, নিশ্চয়ই বলব আমাকে অভিভূত করেছে। আপনারা যথার্থই ভদ্রলোক । এবং বিনয়ীও ।
কাকার ঠিকানাটা যদি লিখে পাঠান, ফোন নাম্বারও; তাহলে রেখে দেবো। পুরো নামটিও—ভুলে গেছি। রায় যে পদবী সেটুকুই মনে আছে শুধু।
আপনি বন-জঙ্গল ভালোবাসেন বলেই মনে হয়েছিলো সেদিন রাতে, স্বল্পসময়ে, জীপ চালাতে চালাতে আপনার সঙ্গে আপনার অল্পবয়সী কাকীমার কথোপকথন শুনে । কে যে কাকীমা আর কে আপনি তা অবশ্য বলতে পারবো না। বোঝার উপায়ও ছিলো না । বেতলার বাংলোতে সবসময়ই বাজার লেগে থাকে আজকাল । শুধু বর্ষার কয়েকটি মাস ছাড়া । তার ওপর আই টি ডি সি-র লজ-ও তো চালু হলো বলে । কিশোর ও পাপড়ি চৌধুরীরাও বেতলার একেবারে মুখেই হোটেল করছেন । নামটি ভারী সুন্দর, “নইহার” । ওরা হাতি-পাগল দম্পতি তাই হাতিদের বাপের বাড়ি হিসেবে নইহার নাম । “বাবুল তোরা নইহার ছটহি যায়” বিখ্যাত ঠুংরী খানি শুনেছেন তো ? তবে নির্জনতা যাঁরা সত্যিই ভালোবাসেন, তাঁদের পক্ষে বেতলাতে থাকার মানে হয় না কোনো । আবারও যদি আসেন এদিকে, আমাকে আগে জানাবেন । কোনো নির্জন বাংলো বুক করে দেব । রান্নার জন্য লোকও ঠিক করে দেব । তবে হাতি বা বাঘকে ভয় পেলে নির্জনে থাকা হবে না । সম্ভব হলে সঙ্গে একজন রান্নার লোক এবং নিজেদের ট্রান্সপোর্ট, প্রেফারেবলি জীপ এবং টিপ-টপ কন্ডিশনের, নিয়ে আসবেন ।
আরও একটা কথা । ওরকমভাবে বুড়ি ছুঁয়ে গেলে ফিরে গিয়ে অন্যদের কাছে “ দেখেছি” বলে গল্পই করা যায় শুধু, কিন্তু নিজের মন কি ভরে ? জঙ্গলে এলে কমপক্ষে টানা সাতটি দিন থাকার জন্যেই আসবেন । তা সে যে জঙ্গলেই যান না কেন ! বনকে সময় না দিলে, চোখ, কান, নাক, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে তার প্রতি একাগ্র না হলে সে কারো কাছেই মন খোলে না । দীর্ঘদিন জঙ্গলে থেকে এইটুকুই শিখেছি । এদিকে আসতে চাইলে সঙ্কোচ করবেন না । জানাবেন নির্দ্বিধায় । রাতের বাঁদুড়ে-টুপি পরা কিম্ভূতকিমাকার জানোয়ারের মতো নয়, দিনের বেলার আলো-ছায়ায় মানুষেরই চেহারায় তখন দেখা দেব । তখন আপনাকেও দেখবো দিনের আলোয় ।
ধন্যবাদ ও নমস্কার জানবেন। যে ঠিকানায় লিখেছেন তাতেই চিঠি পাব । জংলীদের আবার ডেসিগনেশন ! আমি অতি সামান্য লোক । আপনার নামটি ভারী সুন্দর । ‘ঋতি’ মানে কি ? এই নামে অন্য কোনো নারী আছেন বলেও জানিনা। জানিনি এতদিনেও কাউকে ।

ইতি—রাজর্ষি

রাজর্ষি বসু, পালাম্যু, বিহার

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত

সবিনয় নিবেদন

দর্শক

চতুর্থ অঙ্কন :

ডালটনগঞ্জ, পালাম, বিহার
১৩/১১/৮৭

সুচরিতাসু
মহুয়াডাঁর এবং মারুমারে কাজ ছিলো। আজই সন্ধ্যেবেলা ফিরে আপনার চিঠি পেলাম । তাই প্রাপ্তিসংবাদ জানাচ্ছি, জামাকাপড় না খুলেই, যাতে কাল সকালের বাসেই চিঠিটি যায়।
আপনার কাকার কার্ডটি সত্যিই হারিয়ে ফেলেছি। আমি বড় ভুলোমনের মানুষ । তাছাড়া, আমার নিজের কাছে যা-কিছুই নামী বা প্রয়োজনীয় নয় সেই সব তথ্যে ভারাক্রান্ত করতে চাইও না নিজেকে । তাছাড়া আপনার কাকার ঠিকানার মতো ঠিকানা, এখানে বেড়াতে আসা ভদ্রলোকদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন দিয়ে যান, আমাকে প্রতি সপ্তাহে। জানি তো যে কারো সঙ্গেই দেখা হবে না আর। ট্রেনের কামরার আর ট্যুরিস্ট স্পটের আলাপ আইসক্রিমের ঠোঙা বা পাঁউরুটির মোড়া কাগজেরই মতো কামড়াতে বা পথেই পড়ে থাকে। তাই ওসব ঠিকানা রেখে লাভ কি ? ফিরে গিয়ে কেউ মনে রাখে না আবার যদি না ভবিষ্যতে কখনও প্রয়োজন ঘটে। এই প্রেক্ষিতে আপনার ব্যাতিক্রমী চিঠি, নিশ্চয়ই বলব আমাকে অভিভূত করেছে। আপনারা যথার্থই ভদ্রলোক । এবং বিনয়ীও ।
কাকার ঠিকানাটা যদি লিখে পাঠান, ফোন নাম্বারও; তাহলে রেখে দেবো। পুরো নামটিও—ভুলে গেছি। রায় যে পদবী সেটুকুই মনে আছে শুধু।
আপনি বন-জঙ্গল ভালোবাসেন বলেই মনে হয়েছিলো সেদিন রাতে, স্বল্পসময়ে, জীপ চালাতে চালাতে আপনার সঙ্গে আপনার অল্পবয়সী কাকীমার কথোপকথন শুনে । কে যে কাকীমা আর কে আপনি তা অবশ্য বলতে পারবো না। বোঝার উপায়ও ছিলো না । বেতলার বাংলোতে সবসময়ই বাজার লেগে থাকে আজকাল । শুধু বর্ষার কয়েকটি মাস ছাড়া । তার ওপর আই টি ডি সি-র লজ-ও তো চালু হলো বলে । কিশোর ও পাপড়ি চৌধুরীরাও বেতলার একেবারে মুখেই হোটেল করছেন । নামটি ভারী সুন্দর, “নইহার” । ওরা হাতি-পাগল দম্পতি তাই হাতিদের বাপের বাড়ি হিসেবে নইহার নাম । “বাবুল তোরা নইহার ছটহি যায়” বিখ্যাত ঠুংরী খানি শুনেছেন তো ? তবে নির্জনতা যাঁরা সত্যিই ভালোবাসেন, তাঁদের পক্ষে বেতলাতে থাকার মানে হয় না কোনো । আবারও যদি আসেন এদিকে, আমাকে আগে জানাবেন । কোনো নির্জন বাংলো বুক করে দেব । রান্নার জন্য লোকও ঠিক করে দেব । তবে হাতি বা বাঘকে ভয় পেলে নির্জনে থাকা হবে না । সম্ভব হলে সঙ্গে একজন রান্নার লোক এবং নিজেদের ট্রান্সপোর্ট, প্রেফারেবলি জীপ এবং টিপ-টপ কন্ডিশনের, নিয়ে আসবেন ।
আরও একটা কথা । ওরকমভাবে বুড়ি ছুঁয়ে গেলে ফিরে গিয়ে অন্যদের কাছে “ দেখেছি” বলে গল্পই করা যায় শুধু, কিন্তু নিজের মন কি ভরে ? জঙ্গলে এলে কমপক্ষে টানা সাতটি দিন থাকার জন্যেই আসবেন । তা সে যে জঙ্গলেই যান না কেন ! বনকে সময় না দিলে, চোখ, কান, নাক, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে তার প্রতি একাগ্র না হলে সে কারো কাছেই মন খোলে না । দীর্ঘদিন জঙ্গলে থেকে এইটুকুই শিখেছি । এদিকে আসতে চাইলে সঙ্কোচ করবেন না । জানাবেন নির্দ্বিধায় । রাতের বাঁদুড়ে-টুপি পরা কিম্ভূতকিমাকার জানোয়ারের মতো নয়, দিনের বেলার আলো-ছায়ায় মানুষেরই চেহারায় তখন দেখা দেব । তখন আপনাকেও দেখবো দিনের আলোয় ।
ধন্যবাদ ও নমস্কার জানবেন। যে ঠিকানায় লিখেছেন তাতেই চিঠি পাব । জংলীদের আবার ডেসিগনেশন ! আমি অতি সামান্য লোক । আপনার নামটি ভারী সুন্দর । ‘ঋতি’ মানে কি ? এই নামে অন্য কোনো নারী আছেন বলেও জানিনা। জানিনি এতদিনেও কাউকে ।

ইতি—রাজর্ষি

রাজর্ষি বসু, পালাম্যু, বিহার

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত