পঞ্চম অঙ্কন :
১৭-১১-৮৭
বালীগঞ্জ প্লেস, কলকাতা
প্রিয়বরেষু
আমি তো নিজেকে ভদ্রলোক বলে জানতামই । লোক মানে, Person। কিন্তু দেখছি আপনিও কম ভদ্রলোক নন ! জামাকাপড় ছেড়ে খাওয়াদাওয়া করেই না হয় লিখতেন চিঠিটা !
কখনওই খিদে পেটে নিয়ে কাউকে কিছু লিখতে নেই। ক্ষুধার্ত মানুষের চিঠির মধ্যে সচরাচর খিদেই লুকিয়ে থাকে । সে খিদে যে-কোনো খিদেই হোক না কেন । আপনার চিঠিতে অবশ্য ছিলো এক নির্লিপ্ত প্রশান্তি । আশ্চর্য !
জেনে ভাল লাগছে যে, বাঁদুরে-টুপির আঘাতটা যথাস্থানে বেজেছে । আমাকে আপনি জানেনই না । তা জানুন আর নাই জানুন বাঁদুরে-টুপি পরা চলবে না আপনার । আপনার স্ত্রী বা দিদি বা বোনেরা কেউই আপত্তি করেন না ? ওঁরা না করলেও আমি করছি । ছ’ ফিট লম্বা সুগঠিত যুবকের মাথায় বাঁদুরে-টুপি একেবারেই মানায় না । তা ছাড়া, নাম যার রাজর্ষি তার তো শিরস্ত্রাণ বা মুকুটই পরার কথা ছিলো। তার বদলে বাঁদুরে টুপি ! ছিঃ ! কাকার ঠিকানা, সঙ্গের আলাদা কাগজে লিখে পাঠালাম ।
ধরেছেন ঠিকই । কাকীমা আর আমি প্রায় সমবয়সীই । সমবয়সী বলেই ওকে ইচ্ছে করে “কাকিমা” বলে ডাকি অন্যদের সামনে। ও চটে যায়। ওর নাম শ্রুতি । জামসেদপুরের মেয়ে । ওর বাবা টেলকোতে আছেন । রিটায়ার করার এখনও দেরি আছে অনেক । যদি কখনও আপনাকে আবারো জ্বালাতে যাই ওদিকে তবে দুজনেই একসঙ্গে গিয়ে আপনাকে ধন্দে ফেলে দেবো । দেখব ! কে আমি আর কে শ্রুতি তা বুঝতে পারেন কিনা ! কাকীমার স্বামী, কাকা, আমার আপন কাকা নন । বাবার মামাতো ভাই । বয়সে বাবার চেয়ে অনেকই ছোট ।
সত্যি ! খুব ভালো লাগলো পর পর চিঠি পেয়ে আপনার ।
আপনার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের আমার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও আদর জানাবেন । ওঁদের কথা লিখবেন, ইন ডিটেইলস্ । কার কি নাম ? কত বয়স ? আপনার স্ত্রীকে বৌদি বলে সম্বোধন করতে পারি কি ? চিঠিতে ? ওঁকেও চিঠি লিখতে বলবেন । এই অনুরোধে উনি বিরক্ত হবেন কি ? হতেই পারেন । কত মানুষই তো গিয়ে হামলা করেন আপনাদের ওপর । হয়তো আপনারা বিরক্ত । বিশেষ করে উনি । তবে উনি আমাকে লিখলে খুবই খুশি হব । আপনার মা-বাবা, ভাই-বোনেদের কথাও লিখবেন। সব ।
ছেলেবেলায় পেন-ফ্রেন্ড ছিলো অনেক আমার । আপনি বেশ বড় বেলার পেন-ফ্রেন্ড । ভাবতেই মজা লাগছে। এই মুহূর্তে হেভী এঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের অ্যান্টিকুয়েটেড্ গাড়ি আর তার সুপার অ্যানুয়েটেড ড্রাইভারকেও অশেষ ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে । গাড়িটা যদি ঐ অন্ধকার শীতের রাতে খারাপ না হত তবে তো বনের রাজা এবং বনের ঋষিরও সঙ্গে এমন করে আলাপ হত না। ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলেরই জন্যে।
ভালো থাকবেন । মাথায় ঠাণ্ডা লাগলে বাঁদুরে-টুপি না পরে ফেল্ট-হ্যাট পরবেন । বাবা প্রতিবারই নিয়ে আসেন পাইপ আর প্রতিবারই ফেল্ট-হ্যাট। যখনই দেশে আসেন।
মাথা-ভর্তি-টাক বলে বাবা শীতে টুপি ছাড়া চলতেই পারেন না । আপনাকে পাঠিয়ে দেবো ন্যু-ইয়র্ক-এর খুব নামী দোকানের টুপি । কলকাতায় এবারে এখন শীত না পড়ায় নতুন টুপি নতুনই আছে। ব্যবহৃত হয়নি । যেমন নরম তেমনই Moo। এবং গরমও তেমনই। ‘না’ করবেন না। কাকার অফিসের ক্যুরিয়ার থ্রতে পাঠিয়ে দেব রাঁচীতে। সেখান থেকে কাকা আপনাকে পাঠাবার বন্দোবস্ত করবেন। ওগুলো পেয়ে জানাতে ভুলবেন না যেন !
ভালো থাকবেন । ইতি ঋতি রায়