ছয় : গতিহীন অগ্রগতি
বুড্ডা প্রথম গুরুর কাছে ফিরে গেল। গুরুজী তখন সবজি বাগানে কাজ করছিলেন। বুড্ডা সরাসরি বাগানে ঢুকে তাকে সালাম জানিয়ে বলল— ‘গুরুজী, বাগানে পানি দেব?’
গুরুজী তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করতে করতেই বললেন – ‘দুদিন পর তোমাকে যেন এখানে না দেখি।’
‘আমি জানি আমি যেখানেই যাই না কেন, আপনি আমাকে দেখতে পাবেন’—বলল বুড্ডা, ‘কাজেই আপনার চোখকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করব না।’ ‘তার মানে এখানে লুকিয়েও থাকার চেষ্টা করবে না?”
‘আমি জানতাম আপনি আমাকে তাড়াবেন না।’
‘পানি দাও।’
বুড্ডা অত্যন্ত আহলাদের সাথে গাছে পানি দিতে লাগল। পানি দেয়া শেষে সে গুরুজীকে জানাল—’একটা ফুলও ফোটেনি।’
গুরুজী বললেন ‘ঝরেওনি।’
বুড্ডা আশ্বস্ত হলো। গুরুজী বললেন—’খুশী হওয়ার কিছু নেই। জোর ক’রে দুঃখ পাবারও দরকার নেই।’
‘গুরুজী, তবুও যেন তাকিয়ে থাকতে মন চায়। ফোটা এবং ঝ’রে যাওয়ার মাঝামাঝিও দেখার মতো অনেক কিছু রয়ে গেছে।’
‘চোখকে বিশ্বাস কর না।’
‘কানকেও না?’
‘একটা ফুল দেখতে কয়টা চোখ লাগে?’
‘উভয় চোখের একই কাজ। তবুও একটা ছাড়া অন্যটাকে কানা বলা হয়। ‘যার একটাও নেই সে অন্ধ। অথচ দুটো থাকলেও কাজ চলত একটারই।
একই সাথে দুচোখ দিয়ে দুটো জিনিস দেখা যায় না ।’
‘এদিক দিয়ে কানই ভালো।’
‘কান যদি দেখতে পেত আর চোখ শুনতে পেত, তাহলে সব মানুষ অন্ধ ও বধির হয়ে পড়ে থাকত। শোনার যন্ত্রকে এদিক-ওদিক ইচ্ছেমতো ঘোরানো গেলে মানুষের উন্নতি ঘটত বড়জোর বাদুড়ের যোগ্যতা পর্যন্ত এবং দেখার যন্ত্রকে ইচ্ছে মতো ঘোরানো না গেলে মানুষের পায়ের নিচে রোবটের মতো চাকা থাকতে হতো।’
‘গুরুজী, আপনি সত্যকে মিথ্যার মতো আকর্ষণীয় ক’রে বলেছেন।’
“যা ফুটবে তা তুমি দেখনি আর যা ঝ’রে যাবে তুমি তার কান্না শোনোনি । ‘আল্লাহ্ অন্ধকে আলো দান করুন আর বধিরকে সন্দেহমুক্ত রাখুন।’
—ফুটে ওঠার সামনে রয়েছে এক অজানা ভবিষ্যৎ আর ঝ’রে যাবার পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ স্মৃতি। যা ঝরেছে তা যেন না ফোটে। যা ফুটেছে তাতে পানি দাও । যা ফুটবে তার দায়িত্ব তোমার নয়।’