Chithipotro, তারিকুল আমিন

চিঠিপত্র

০ মন্তব্য দর্শক

২০/এ, ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
তারিখ : ১০/০৮/২০২৫

শ্রদ্ধেয় আব্বাজান,
আমার সালাম নিবেন। প্রিয় বাবা, আপনি জানেন আমি চাপা স্বভাবের মানুষ। আর বন্ধুরা মনে করে আমি রহস্যময়ী মানুষ। আপনাকে আজ যে চিঠিটা লিখছি আমার জানা মতে, এমন চিঠি কেউ লিখেনি। পাশের রুমে বসেই আপনার নিকট চিঠি লিখছি। দুজন একই ছাদের নিচে বাস করি। প্রিয় বাবা, প্রায় ১০ বা ১৫ বছর আগে একবার বলেছেন, ‘কেউ যাতে বলতে না পারে বাবার টাকায় বড় হয়েছো? নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হও।’ আপনি উদাহরণ দিয়েছিলেন সেদিন, বারক ওবামার মেয়েকে নাকি বলেছে- যদি তুমি বাহিরের পৃথিবীর মানুষের দু:খ কষ্ট না দেখো তাহলে তুমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তাই তার মেয়ে একটি রেস্টুরেন্টে থালা বাসন ধোয়ার কাজ নেয়। সেই কথা আমার এখনও মনে আছে। আমিও চাই আপনি যাতে মাথা উঁচু করে বলতে পারেন আমার সন্তান আমার সাহায্য ছাড়া আজ প্রতিষ্ঠিত। আমার আর আপনার একই স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নটা পূরণ করতে হলে ১০ বা ২০ হাজার টাকার চাকরি করে হয়তো সম্ভব নয়তো সম্ভব না।
বাবা কলেজে দু’বছর, বিশ^বিদ্যালয়ে ৬ বছর পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার মোট প্রায় ৫ লাখ এর উপর খরচ হয়েছে। এবং আপনি চেয়েছেন আমি যাতে জাপানে গিয়ে পড়তে যাই তাই একটি বই কিনে দিয়েছেন। আমার ছয়জন বন্ধু আজ জাপানে পড়াশোনা করছে। তাদের কাছ থেকে শুনেছি জাপানে যেতেই লাগে ১৫ থেকে ২০ লাখ। এবং দুজন বন্ধু আছে লন্ডনে। সেখানেও এতো খরচ। আমার পক্ষ্যে এতো টাকা যোগার করা সম্ভব না। তাই আমি সিলেক্ট করেছি রাশিয়া, চায়না আর জর্জিয়া। সেখানে আমি চাকরি ও পড়াশোনা করতে পারবো। ২৪ ও ২৫ সাল পর্যন্ত আমার বিদেশে যাওয়ার ইসু নিয়ে প্রায় আরো ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো ৫-৬ লাখ টাকা লাগে। আমি আর পারছি না। এবং আমি নব ভাবনার চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি। তারা আমাকে বলেছে যতদিন বিদেশে না যাও শুক্রবার শনিবার চাকরি কর। তাই শুক্রবার শনিবার দু’জায়গায় চাকরি করছি। বাবা আমি আপনার ছেলে না ভেবে আমাকে ৫-৬ লাখ টাকা লোন দেন আমি আপনাকে ২ বছরের মধ্যে পরিশোধ করে দিব। আমাকে একটু সাহায্য করেন। কারণ আপনি যাতে বলতে পারেন আমার ছেলে আমার সাহায্য ছাড়া আজ ও প্রতিষ্ঠিত। আর দোয়া করেন যাতে রাশিয়া যেতে পারি। বাবা দিন যত যাচ্ছে ততই আমার বয়সও হচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন।
বাবা আপনি গ্রামের সকল মানুষকে বলেছেন। সবার কাছে প্রশ্ন বৃদ্ধ হচ্ছি আমি। তুমি নাকি বিদেশে যাও? তোমার বাবা নাকি তোমাকে বিদেশে পড়াশোনা করতে পাঠায়? কই কবে যাবে? আমার বিদেশে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। এক হচ্ছে দেশের এই অবস্থা আর এক হচ্ছে আপনার সম্মান ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নানান জনের নানান কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে আপনার কথার দাম আমি দিতে পারি। তাই বাবা আমাকে একটু সাহায্য করেন। যাতে আপনার সম্মান আর আমাকে যারা খাটো বলে নিচু করে তাদের উচিত জবাব দিতে চাই আমার মেধা আর জ্ঞান দিয়ে।
আপনার টাকা আমি দিয়ে দিব। বাবা আপনি বলেছেন যে কখনও নিজের স্বপ্ন কাউকে বলবে না। তাই স্বপ্নটা বললাম না। আমি একটি টার্গেট নিয়েছি ৩ বছরের। বাবা আপনার বাণীতেই বলেছেনÑ ‘জীবন যুদ্ধটা কখনও থামিয়ে দিবেন না, মনে রাখবেন, জীবন যুদ্ধে কখনও বিরতি হয়না।’
আমি আমার জীবন যুদ্ধটা থামাতে চাই না। চাই না বিরতি নিতে। তবে প্রতিনিয়ত মানুষের কথা শুনে আজ আমার মনে হচ্ছে জীবন যুদ্ধটা মনে হয় থামাতেই হবে। তারপরও চাইছি থামাবো না। লড়ে যাবো। কিন্তু লড়তে গেলে বাবা একা হয় না। আপনার সহযোগিতা লাগবেই। আর মানুষের কাছে আপনি যাতে ছোট না হন। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি যদি টাকা আবার ম্যানেজ করি তাহলে একদিকে বয়স যাবে। অন্যদিকে ওদের নীতি এবং সুযোগগুলো বন্ধ করে দিবে। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি এবং আপনি ভালো করেনই জানে আমি কখনও আপনার কাছে কিছু চাইনি। আর এমন কিছু আছে যা চাওয়ার আগে পেয়েছি। তবে বাবা এবার আমি সত্যিই নিরুপায়। আমি উপরে বেচে থাকলেও মনে হয় ভিতরে মরে আছি। আপনার সাহায্য আমার খুব দরকার। আমাকে মোট ৬ লক্ষ টাকা দিলে সবচেয়ে ভালো। আমি ছয় লাখ আপনার কাছ থেকে রেজিস্টেশন করে নিব। এই দশ লাখ সর্বনিম্ন ২ বছর আর সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধ করে দিব। আর আমি যে দেশেই যাই না কেন। ভালো একটি ফলাফল নিয়ে দেশে আসতে পারি?
বাবা ছাড়া এই দুনিয়া অন্ধকার। আর আমাদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি; কারণটা আপনিও জানেন। এবং তাও বলি আপনি যদি পৃথিবীতে না থাকেন তাহলে আমাদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আমার পরিবার তো থাকবেই না। আর মার পরিবারে তো আরো না। আর বাবা না থাকলে যে কতটা কষ্ট সেটা আপনি হয়তো জানেন না! আমার ছোটবেলায় যখন আপনি দু’বছর ছিলেন না। তখন আমি অনেক লাঞ্চিত হয়েছি। অনেক মানুষের কথা শুনেছি। কিছুটা মনে আছে। আর এখন খালাতো বোন ফারজানাকে দেখে আরো বেশি বুঝতে পারি। বাবা আমি আপনার কষ্টের টাকা নষ্ট করবো না। আমি চাই আপনার আর মার মুখ উজ্জল করতে। এবং আমরা সপরিবার মিলে অন্যদেশে চলে যেতে। কারণ এই দেশে আমরা বিদেশে বসবাসরত মানুষের মত বাস করি। তাই আমি মনে করি আমাদের এই দেশ থেকে যাওয়া ভালো। এবং আপনিও চান সেটাই। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। এবং কথাগুলোকে বিবেচনা করবেন। আল্লাহ দিলে এই সেপ্টেম্বরে চলে যাবো। আর না হলে ফেব্রুয়ারি।

ইতি
আপনার স্নেহের
তারিকুল আমিন

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত

চিঠিপত্র

দর্শক

২০/এ, ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
তারিখ : ১০/০৮/২০২৫

শ্রদ্ধেয় আব্বাজান,
আমার সালাম নিবেন। প্রিয় বাবা, আপনি জানেন আমি চাপা স্বভাবের মানুষ। আর বন্ধুরা মনে করে আমি রহস্যময়ী মানুষ। আপনাকে আজ যে চিঠিটা লিখছি আমার জানা মতে, এমন চিঠি কেউ লিখেনি। পাশের রুমে বসেই আপনার নিকট চিঠি লিখছি। দুজন একই ছাদের নিচে বাস করি। প্রিয় বাবা, প্রায় ১০ বা ১৫ বছর আগে একবার বলেছেন, ‘কেউ যাতে বলতে না পারে বাবার টাকায় বড় হয়েছো? নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হও।’ আপনি উদাহরণ দিয়েছিলেন সেদিন, বারক ওবামার মেয়েকে নাকি বলেছে- যদি তুমি বাহিরের পৃথিবীর মানুষের দু:খ কষ্ট না দেখো তাহলে তুমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তাই তার মেয়ে একটি রেস্টুরেন্টে থালা বাসন ধোয়ার কাজ নেয়। সেই কথা আমার এখনও মনে আছে। আমিও চাই আপনি যাতে মাথা উঁচু করে বলতে পারেন আমার সন্তান আমার সাহায্য ছাড়া আজ প্রতিষ্ঠিত। আমার আর আপনার একই স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নটা পূরণ করতে হলে ১০ বা ২০ হাজার টাকার চাকরি করে হয়তো সম্ভব নয়তো সম্ভব না।
বাবা কলেজে দু’বছর, বিশ^বিদ্যালয়ে ৬ বছর পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার মোট প্রায় ৫ লাখ এর উপর খরচ হয়েছে। এবং আপনি চেয়েছেন আমি যাতে জাপানে গিয়ে পড়তে যাই তাই একটি বই কিনে দিয়েছেন। আমার ছয়জন বন্ধু আজ জাপানে পড়াশোনা করছে। তাদের কাছ থেকে শুনেছি জাপানে যেতেই লাগে ১৫ থেকে ২০ লাখ। এবং দুজন বন্ধু আছে লন্ডনে। সেখানেও এতো খরচ। আমার পক্ষ্যে এতো টাকা যোগার করা সম্ভব না। তাই আমি সিলেক্ট করেছি রাশিয়া, চায়না আর জর্জিয়া। সেখানে আমি চাকরি ও পড়াশোনা করতে পারবো। ২৪ ও ২৫ সাল পর্যন্ত আমার বিদেশে যাওয়ার ইসু নিয়ে প্রায় আরো ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো ৫-৬ লাখ টাকা লাগে। আমি আর পারছি না। এবং আমি নব ভাবনার চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি। তারা আমাকে বলেছে যতদিন বিদেশে না যাও শুক্রবার শনিবার চাকরি কর। তাই শুক্রবার শনিবার দু’জায়গায় চাকরি করছি। বাবা আমি আপনার ছেলে না ভেবে আমাকে ৫-৬ লাখ টাকা লোন দেন আমি আপনাকে ২ বছরের মধ্যে পরিশোধ করে দিব। আমাকে একটু সাহায্য করেন। কারণ আপনি যাতে বলতে পারেন আমার ছেলে আমার সাহায্য ছাড়া আজ ও প্রতিষ্ঠিত। আর দোয়া করেন যাতে রাশিয়া যেতে পারি। বাবা দিন যত যাচ্ছে ততই আমার বয়সও হচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন।
বাবা আপনি গ্রামের সকল মানুষকে বলেছেন। সবার কাছে প্রশ্ন বৃদ্ধ হচ্ছি আমি। তুমি নাকি বিদেশে যাও? তোমার বাবা নাকি তোমাকে বিদেশে পড়াশোনা করতে পাঠায়? কই কবে যাবে? আমার বিদেশে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। এক হচ্ছে দেশের এই অবস্থা আর এক হচ্ছে আপনার সম্মান ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নানান জনের নানান কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে আপনার কথার দাম আমি দিতে পারি। তাই বাবা আমাকে একটু সাহায্য করেন। যাতে আপনার সম্মান আর আমাকে যারা খাটো বলে নিচু করে তাদের উচিত জবাব দিতে চাই আমার মেধা আর জ্ঞান দিয়ে।
আপনার টাকা আমি দিয়ে দিব। বাবা আপনি বলেছেন যে কখনও নিজের স্বপ্ন কাউকে বলবে না। তাই স্বপ্নটা বললাম না। আমি একটি টার্গেট নিয়েছি ৩ বছরের। বাবা আপনার বাণীতেই বলেছেনÑ ‘জীবন যুদ্ধটা কখনও থামিয়ে দিবেন না, মনে রাখবেন, জীবন যুদ্ধে কখনও বিরতি হয়না।’
আমি আমার জীবন যুদ্ধটা থামাতে চাই না। চাই না বিরতি নিতে। তবে প্রতিনিয়ত মানুষের কথা শুনে আজ আমার মনে হচ্ছে জীবন যুদ্ধটা মনে হয় থামাতেই হবে। তারপরও চাইছি থামাবো না। লড়ে যাবো। কিন্তু লড়তে গেলে বাবা একা হয় না। আপনার সহযোগিতা লাগবেই। আর মানুষের কাছে আপনি যাতে ছোট না হন। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি যদি টাকা আবার ম্যানেজ করি তাহলে একদিকে বয়স যাবে। অন্যদিকে ওদের নীতি এবং সুযোগগুলো বন্ধ করে দিবে। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি এবং আপনি ভালো করেনই জানে আমি কখনও আপনার কাছে কিছু চাইনি। আর এমন কিছু আছে যা চাওয়ার আগে পেয়েছি। তবে বাবা এবার আমি সত্যিই নিরুপায়। আমি উপরে বেচে থাকলেও মনে হয় ভিতরে মরে আছি। আপনার সাহায্য আমার খুব দরকার। আমাকে মোট ৬ লক্ষ টাকা দিলে সবচেয়ে ভালো। আমি ছয় লাখ আপনার কাছ থেকে রেজিস্টেশন করে নিব। এই দশ লাখ সর্বনিম্ন ২ বছর আর সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধ করে দিব। আর আমি যে দেশেই যাই না কেন। ভালো একটি ফলাফল নিয়ে দেশে আসতে পারি?
বাবা ছাড়া এই দুনিয়া অন্ধকার। আর আমাদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি; কারণটা আপনিও জানেন। এবং তাও বলি আপনি যদি পৃথিবীতে না থাকেন তাহলে আমাদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আমার পরিবার তো থাকবেই না। আর মার পরিবারে তো আরো না। আর বাবা না থাকলে যে কতটা কষ্ট সেটা আপনি হয়তো জানেন না! আমার ছোটবেলায় যখন আপনি দু’বছর ছিলেন না। তখন আমি অনেক লাঞ্চিত হয়েছি। অনেক মানুষের কথা শুনেছি। কিছুটা মনে আছে। আর এখন খালাতো বোন ফারজানাকে দেখে আরো বেশি বুঝতে পারি। বাবা আমি আপনার কষ্টের টাকা নষ্ট করবো না। আমি চাই আপনার আর মার মুখ উজ্জল করতে। এবং আমরা সপরিবার মিলে অন্যদেশে চলে যেতে। কারণ এই দেশে আমরা বিদেশে বসবাসরত মানুষের মত বাস করি। তাই আমি মনে করি আমাদের এই দেশ থেকে যাওয়া ভালো। এবং আপনিও চান সেটাই। তাই আমাকে একটু সাহায্য করেন। এবং কথাগুলোকে বিবেচনা করবেন। আল্লাহ দিলে এই সেপ্টেম্বরে চলে যাবো। আর না হলে ফেব্রুয়ারি।

ইতি
আপনার স্নেহের
তারিকুল আমিন

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত