Mainamatir botgach, ময়নামতীর বটগাছ, বন্দে আলী মিয়া, bandey ali miah, proggapath, progga, প্রজ্ঞাপাঠ, bangla literature, bangla kobita, বাংলা সাহিত্য, কবিতা, বাংলা কবিতা, প্রজ্ঞা, শিল্প-সাহিত্য, poem, bangla poem

ময়নামতীর বটগাছ

০ মন্তব্য দর্শক

বুড়ো বটগাছ—
দ্বাপর হইতে কলির অবধি আজ
মাঠের সীমায় ঠাঁই দাঁড়াইয়৷ শূন্যে নজর তুলি
মেঘেরে ধরিতে চাহে হেলায়ে অঙ্গুলি ;-
আকাশে তারারা সবে কী কথা যে কহে
শুনি হেসে মনে মনে গোপনেই রহে।
কারা এলো—গেল কারা সব তার চেনা
শুধিতে আসিয়াছিলো দুনিয়ার দেনা,
তাহাদেরে স্মরি–
পাতা নাড়া শব্দে আজি কাঁদে দিন ভরি।

মাদার গাজী সে নাকি এই গাছ ’পরে
বারো মাস বসবাস করে।
তাহারি জটার প্রায়
থলো থলো বও সব নেমেচে তলায় ;
হাটুরে লোকেরা কয়
তারা হেথা পাইয়াছে ভয়।
মাঝরাতে ফিরিতে ঘরের পথ
গাছের ওপরে সন্ন্যাসী তারা দেখিয়াছে আলামত।

ডাক দিয়ে নাকি সুরে
বলে “ওরে, সরে যা না দূরে
ওই হোথা ঘুরে চলে যা যেথায় যাবি।”
দেখাইয়া দেয় পদ্মবিলের পানে
কিছু যারা নাহি জানে
বিলের মধ্যে নাবি
পথ হারাইয়া ওঠে নাকো আর
পরদিনে দেখে গ্রামের লোকেরা মৃত দেহখানি তার।

চালাক যাহারা খুব
বলে তারা ডেকে “পথ ছাড়ো ওগো বাবাজী গো আজ
কিনে দেবো কাল ধূপ,
কিনে দেবো গাঁজা—দুধ ভাঁড় দুই—সোয়া পাঁচানার চিনি
দেরী হবে নাকো—শেষ জুম্মার দিন-ই।”

বালু দুয়ারের বয়রা ছবেদ সেখ
ওই গাছতলে জমি কিনে চাষে গুরাণ করে দিন,
মানসা হয়েচে হাঁসিল যাদের—শুধিতে তাহারা ঋণ
হাজত সরঞ্জাম
এনে রেখে দিয়ে গাছের তলায় করে তারা পেরলাম।
বলে “বাবাজী গো, দিয়ে গেনু মোরা মানসার সব চিজ,
মুসিবত হতে রেহাই মোদের দিস্ ।”

ছবেদ সেখের টুকরো জমিটা এই সব জিনিসেতে
ভরে যায় একেবারে ।
জমি কিনে তার দুনো হলো লাভ ভাবি তাই বারে বারে
ছবেদ বেচারী আপনার সব জানি
মানসার পাঁঠা মোরগ মুরগী গাঁজার কল্কে আনি
নিজেই সে গুলো খায় ।
লোকে বলে তারে—“মরবি এবার হায়,
বাবাজীর ধন খাইতেছ তুমি—বাঁচন তোমার নাই । ”
শুনিয়া সে হাসে—‘মরিব তো বটে—আজ তবে খেয়ে যাই ।”

সেবার বছর পরে
আমন বতর উঠিলো না তার ঘরে।
এমন রোদেও জন্মেনি শুধু তাহারি জমিতে ধান
ব্যাপার দেখিয়া ছবেদ সেখের ভাঙিলো কলিজাখান ;
সারা দিনমান জমির কিনারে বসিয়া তাহার কাটে
ঘুরিয়া বেড়ায় ময়নামতীর মাঠে।
বছরের ভাত কেড়ে নিলো খোদা — কিছুই দিলো না তায়
নিশ্বাস ফেলি আকাশের পানে চায়।

এমন নসিব তার—
সেই বশেখেই চোখ দুটি গেল—দিনরাত একাকার ।
“ছবেদ এবার দেখ” মোড়ল ডাকিয়া কয়,
“মাদার গাজীর মানস খাওয়া যার তার কাজ নয় ;
গায়ের জোরেতে শোনো নাই কথা—এবার তো পেলে টের
শাস্তি হয়েছে ঢের।”

ব্যামোতে ভুগিয়া বহুদিন হলো মরেচে ছবেদ আলি
গাঁ’র লোকে বলে বিদায় আপদ– গিয়েচে চোখের বালি।

আজো সেই বটগাছ
তেমনি করিয়া পাতা নেড়ে কাঁদে একলা মাঠের মাঝ।

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত

ময়নামতীর বটগাছ

দর্শক

বুড়ো বটগাছ—
দ্বাপর হইতে কলির অবধি আজ
মাঠের সীমায় ঠাঁই দাঁড়াইয়৷ শূন্যে নজর তুলি
মেঘেরে ধরিতে চাহে হেলায়ে অঙ্গুলি ;-
আকাশে তারারা সবে কী কথা যে কহে
শুনি হেসে মনে মনে গোপনেই রহে।
কারা এলো—গেল কারা সব তার চেনা
শুধিতে আসিয়াছিলো দুনিয়ার দেনা,
তাহাদেরে স্মরি–
পাতা নাড়া শব্দে আজি কাঁদে দিন ভরি।

মাদার গাজী সে নাকি এই গাছ ’পরে
বারো মাস বসবাস করে।
তাহারি জটার প্রায়
থলো থলো বও সব নেমেচে তলায় ;
হাটুরে লোকেরা কয়
তারা হেথা পাইয়াছে ভয়।
মাঝরাতে ফিরিতে ঘরের পথ
গাছের ওপরে সন্ন্যাসী তারা দেখিয়াছে আলামত।

ডাক দিয়ে নাকি সুরে
বলে “ওরে, সরে যা না দূরে
ওই হোথা ঘুরে চলে যা যেথায় যাবি।”
দেখাইয়া দেয় পদ্মবিলের পানে
কিছু যারা নাহি জানে
বিলের মধ্যে নাবি
পথ হারাইয়া ওঠে নাকো আর
পরদিনে দেখে গ্রামের লোকেরা মৃত দেহখানি তার।

চালাক যাহারা খুব
বলে তারা ডেকে “পথ ছাড়ো ওগো বাবাজী গো আজ
কিনে দেবো কাল ধূপ,
কিনে দেবো গাঁজা—দুধ ভাঁড় দুই—সোয়া পাঁচানার চিনি
দেরী হবে নাকো—শেষ জুম্মার দিন-ই।”

বালু দুয়ারের বয়রা ছবেদ সেখ
ওই গাছতলে জমি কিনে চাষে গুরাণ করে দিন,
মানসা হয়েচে হাঁসিল যাদের—শুধিতে তাহারা ঋণ
হাজত সরঞ্জাম
এনে রেখে দিয়ে গাছের তলায় করে তারা পেরলাম।
বলে “বাবাজী গো, দিয়ে গেনু মোরা মানসার সব চিজ,
মুসিবত হতে রেহাই মোদের দিস্ ।”

ছবেদ সেখের টুকরো জমিটা এই সব জিনিসেতে
ভরে যায় একেবারে ।
জমি কিনে তার দুনো হলো লাভ ভাবি তাই বারে বারে
ছবেদ বেচারী আপনার সব জানি
মানসার পাঁঠা মোরগ মুরগী গাঁজার কল্কে আনি
নিজেই সে গুলো খায় ।
লোকে বলে তারে—“মরবি এবার হায়,
বাবাজীর ধন খাইতেছ তুমি—বাঁচন তোমার নাই । ”
শুনিয়া সে হাসে—‘মরিব তো বটে—আজ তবে খেয়ে যাই ।”

সেবার বছর পরে
আমন বতর উঠিলো না তার ঘরে।
এমন রোদেও জন্মেনি শুধু তাহারি জমিতে ধান
ব্যাপার দেখিয়া ছবেদ সেখের ভাঙিলো কলিজাখান ;
সারা দিনমান জমির কিনারে বসিয়া তাহার কাটে
ঘুরিয়া বেড়ায় ময়নামতীর মাঠে।
বছরের ভাত কেড়ে নিলো খোদা — কিছুই দিলো না তায়
নিশ্বাস ফেলি আকাশের পানে চায়।

এমন নসিব তার—
সেই বশেখেই চোখ দুটি গেল—দিনরাত একাকার ।
“ছবেদ এবার দেখ” মোড়ল ডাকিয়া কয়,
“মাদার গাজীর মানস খাওয়া যার তার কাজ নয় ;
গায়ের জোরেতে শোনো নাই কথা—এবার তো পেলে টের
শাস্তি হয়েছে ঢের।”

ব্যামোতে ভুগিয়া বহুদিন হলো মরেচে ছবেদ আলি
গাঁ’র লোকে বলে বিদায় আপদ– গিয়েচে চোখের বালি।

আজো সেই বটগাছ
তেমনি করিয়া পাতা নেড়ে কাঁদে একলা মাঠের মাঝ।

সর্ব্বশেষ প্রকাশিত