চারিদিকে শুধু জল,
শ্যাওলার সবুজে ভিজে থাকা স্থিরতা—
মনে হয় কার্তিক শেষে ঝরা হাওয়ার ভেতর
এক পুরোনো ছায়া নেমে আসে নিরবে।
আমি তাকে কোনোদিন চিনিনি,
তবু সে যেন আমার নাম জানে—
অগণিত শিশিরের ফোঁটা দিয়ে
মুখে লিখে গেছে অদৃশ্য অক্ষর।
দূর থেকে এক নীল পাখি ডানা মেলে আসে,
সে কি নদীর পারে জন্মেছে,
নাকি মৃত্তিকার গভীর একাকীত্বে লুকিয়ে ছিলো এতদিন?
তার ডানার ঝাপটায় আমি শুনি
সব পথের শেষে অপেক্ষা করছে
এক অনিবার্য ধূসর নীরবতা।
এই নীরবতার ভেতর জমে আছে
আমার সমস্ত দ্বিধার অন্ধকার ঋণ।
হলুদ হয়ে আসা চাঁদ,
তার সঙ্গে ভেসে ওঠে আরো কত শত পুরোনো স্মৃতি—
তারা একে একে নুয়ে পড়ে,
যেন আদিম শীতের ভারে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
তবু কে জানে—
হয়তো অন্য কোনো নক্ষত্রের দেশে
তারা আবার ফিরে দাঁড়াবে!
এমন রাতে মাঠের ঘাসও
অন্ধকারে নিজেকে খুঁজে ফেরে।
যেন কেউ কোনোদিন ছিলই না,
কোনো মুখ, কোনো উষ্ণ দৃষ্টি—
যা একবারই দেখা দিয়েছিলো হঠাৎ।
আজ মহুয়ার বন যেমন তাকে ভুলে গেছে,
আমিও তেমনই ভুলে যাই—
পাতার আড়ালে জমে থাকা অশ্রুর মতো।
তবু এই দিনলিপি রয়ে যায়—
এক অনন্ত সাক্ষ্য,
যেখানে হারানো আর ভুলে যাওয়া
নতুনভাবে বেঁচে ওঠে প্রতিটি কথায়।