বারো :
দিনগুলো বড় একঘেয়ে মনে হয় আহমদ খলিলের। কয়েক মাস হল তারা এখানে এসেছে। তার নিজের দেহের ক্ষতগুলো এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তাঁবুর দরজার কাছে বসে সময় কাটায় সে। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন কাটানো যায় ! বিরক্তিতে তার মন ভরে ওঠে। তাঁবুর ভিতরে ফিরে আসে সে। এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে খলিফা। দেখলেই বোঝা যায় যে বিছানা ছেড়ে ওঠার শক্তি তার নেই। তার রুগ্ন দেহ আরো রুগ্ন হয়ে গেছে। মনে হয়, শুধু হাড়গুলো ছাড়া তার শরীরে আর কিছুই নেই। কিন্তু এ অবস্থায়ও তার চোখের দিকে চাইলে শিহরিত হতে হয়। অস্বাভাবিক উজ্জ্বল দু’টি চোখ খলিফার । সে চোখে কিসের ভাষা- আহমদ খলিল বুঝে উঠতে পারে না ।
পোশাকের ভিতর থেকে আবদুল আজিজের দেয়া ছুরিখানা বের করে আহমদ খলিল। কতদিন আগে যে আবদুল আজিজ তাকে এটা দিয়েছিল! ছুরিটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে থাকে সে। এ ছুরিই পাঁচ জন ইহুদীর রক্তে রাঙা হয়ে উঠেছিল। কয়েক মাস আগে ইরাক-আল মানশিয়া ছেড়ে আসার কথা মনে হয় তার। ইহুদী সৈন্যরা গ্রামটিকে ঘেরাও করে ফেলেছিল। প্রাণপণে লড়েও পেরে ওঠেনি গ্রামের মানুষগুলো। অসংখ্য ইহুদী সৈন্যের মোকাবেলায় ক’জন মাত্র মানুষ! তবু পিছু হটেনি কেউ। অবশেষে হাতাহাতি যুদ্ধ। আহমদ খলিল নিজেও তার জীবনের প্রথম সত্যিকার লড়াইয়ে নেমে পড়েছিল। বয়সে ছোট এবং শারীরিক দিক দিয়ে ইহুদীদের তুলনায় দুর্বল হয়েও মালেক ওহাবের পাশাপাশি পাঁচজন ইহুদী সৈন্যের সাথে জীবনবাজি রেখে লড়েছিল সে। সবাইকে হত্যা করার পর জীবিত কয়েকজন মাত্র গ্রামবাসীর সাথে শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়ে এসেছিল সেও। ইহুদীদের মেশিনগানের গুলীতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে দাফন করার কোন উপায় ছিল না। পরে আরো বহু ফিলিস্তিনির সাথে তারা চলে আসে গাজার কাছে এই উদ্বাস্তু শিবিরে। পুরো শিবিরের দৃশ্যটা এ সময় চোখে ভেসে ওঠে তার। একটা জঙ্গলের মধ্যে খানিকটা জায়গা সাফ করে এর পত্তন করা হয়েছে। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে করা হয়েছে সুরক্ষিত। এরই ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য ছিন্নমূল ক্ষুধার্ত মানুষ।
গাজার নিকটবর্তী এ শিবিরে আসার কিছুদিন পর প্রত্যেককে একটা করে রেশন কার্ড দেয়া হয়েছে। এখানকার যে কোন লোকের কাছেই এ কার্ডটি একটি মহামূল্যবান সম্পদ। কিন্তু আহমদ খলিলের কাছে এটিকে একটি যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী জিনিস ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না। তার মনে হয়, রেশন কার্ডের অর্থই হলো মাসিক রেশনের জন্যে ভিখারীর মতো ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাক। শিবিরের কর্তারা প্রত্যেকের জন্যে কিছু পরিমাণ ময়দা, চাল, চিনি ইত্যাদিসহ কোন কোন উপলক্ষে এক টুকরো সাবানও দিয়ে থাকে। কখনো কখনো ছেঁড়া কম্বল এবং পুরনো কাপড়ও দেয়া হয়। তীব্র ক্রোধ এবং ঘৃণার আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আহমদ খলিল এ করুণার দানগুলো শিবিরে বয়ে আনে। তার মনে হয়, তাকে বেঁচে থাকতে হবে এবং এ বেঁচে থাকার জন্যেই এগুলো না নিয়ে তার উপায় নেই ।
এখানে আসার পর আহমদ খলিল সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছে মালেক ওহাবের আচরণে । মালেক ওহাব তার দাড়ি কেটে ফেলেছেন। তিনি এখন শার্ট ও জুতা পরেন। এ ব্যাপারে শিবিরের বহু তরুণ ও বয়স্ক লোকের সাথে তার মিল দেখা যায়। আহমদ খলিলের মনে হয়, তার আব্বা এখন নিজেকে একজন বিদেশী করে তোলার কাজে ব্যস্ত। ইদানিং নামাজ আদায়েও তার খুবই অনীহা দেখা যাচ্ছে। এমন কি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে রোজাও রাখেন নি তিনি। ধর্মের প্রতি আব্বার এই অবহেলা দেখে আহমদ খলিল অত্যন্ত দুঃখ পায়। তার মনে হয়, মালেক ওহাবের আসলেই ধর্মের প্রতি তেমন শ্রদ্ধাবোধ ছিলনা। গ্রামে থাকতে অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে তিনি যেন বাধ্য হয়েই এতদিন নামায রোজা করে এসেছেন। এখন, এই শিবিরে এ ব্যাপারে কারো মাথা ব্যথা নেই দেখে মালেক ওহাবও সুযোগ পেয়েছেন। তাই, নামাজ রোযা ছেড়ে প্রগতিশীল হয়ে ওঠার ব্যাপারেই তিনি এখন বেশি ব্যস্ত। আহমদ খলিল নীরবে তার পিতার এই অধঃপতন লক্ষ্য করে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলা তার হয়ে ওঠেনা। তার মনে হয়- আপন জন্মদাতার সমালোচনা করবে সে কি করে?
ব্যাপারটি অবশেষে উল্টো হয়ে দাঁড়ালো। আহমদ খলিল নয়, মালেক ওহাবই ছেলের সমালোচনা শুরু করেন। গ্রামের পরিবেশে তিনি আহমদ খলিলকে তেমন কিছু না বললেও এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধর্ম-কর্মের দিকে আহমদ খলিলের নিষ্ঠা মালেক ওহাবকে বিরক্ত করে তোলে। কারণ, এ শিবিরে এখন যারা আশ্রয় পেয়েছে, ভিটেমাটি ছাড়ার আগে এদের অনেকেই ছিল শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, প্রকৌশলী ইত্যাদি। যুদ্ধের কারণে সর্বস্ব হারিয়ে এখানে আসতে বাধ্য হলেও এরা কেউই নিজেদের অতীত জীবন, পদমর্যাদা, সম্পদ, সুযোগ সুবিধা সর্বোপরি সমাজের উচ্চমহলের লোক হিসেবে আধুনিক চাল চলনের অভ্যাস ভুলতে পারে নি। ফলে পুরো শিবির জুড়েই এখন পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির উদ্দাম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ফেলাহীন সন্তান আহমদ খলিল যেন সত্যিই একবারে বেমানান হয়ে পড়ে ।
আহমদ খলিলের ইদানিং মনে হয়, মালেক ওহাব তাকে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতেও সংকোচ বোধ করছেন। উভয়ের জন্যেই ব্যাপারটি জটিল হয়ে ওঠে। আহমদ খলিল কখনো তার আব্বার সাথে তাঁবুর বাইরে এলে তার পাশে হাঁটতে খুবই অস্বস্তি বোধ করে। মালেক ওহাবও তার বন্ধুমহলে পারতপক্ষে তাকে সন্তান হিসেবে পরিচয় দেন না যতক্ষণ না তারা ব্যাপারটি কোন ভাবে জেনে ফেলে। তাঁবুতে ফিরে আসার পরই তাকে গোঁড়া, ধর্মান্ধ, আদিম যুগের মানুষ বলে আব্বার কাছে কথা শুনতে হয়।
খলিফা অনেকটা বড় হয়ে উঠেছে। স্কুলে যেতে শুরু করেছে সে । লেখাপড়ার দিকে প্রচণ্ড আগ্রহ তার। একটা দিনও স্কুলে যাওয়া বাদ দেয় না। পক্ষান্তরে চাচাতো ভাই রশিদের এদিকে কোন আগ্রহই নেই। একদিন খলিফা রশিদকে জিজ্ঞেস করে-
: তুমি আমার সাথে স্কুলে যাও না কেন? তুমি কি লেখাপড়া শিখবে না?
: স্কুল ! চেঁচিয়ে ওঠে রশিদ- শুধু ছোটরাই তো ওখানে যায়। আমি যাবো কেন? তুমি দ্যাখোনা, সে বলতে থাকে- ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই আমি বড় হয়ে যাব । তখন আমি ফেদাইনদের (ফিলিস্তিনি গেরিলা) সাথে যোগ দেব। শত্রুকে ধ্বংস করতে না পারলে লেখাপড়া শিখে কি হবে?
এদিকে মালেক ওহাব আহমদ খলিলকে তার স্কুলে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় : না, ওইসব কচি বাচ্চাদের সাথে আমি লেখাপড়া করতে পারবনা।
তবে মালেক ওহাব হাল ছাড়লেন না। আহমদ খলিলের জন্যে অংক, বিজ্ঞান এবং ইংরেজী শেখার কিছু বই নিয়ে এলেন তিনি। বললেন –
: শোন, লেখাপড়া করাটা মোটেই কঠিন কোন ব্যাপার নয়। চেষ্টা করলেই তুমি পারবে। তুমি শুরু কর, আমি তোমাকে সাহায্য করব।
কিন্তু আহমদ খলিলের এদিকে কোন আগ্রহই ছিল না। তার আব্বার অনুরোধ, আদেশ বা ভীতি প্রদর্শনেও তার এ মনোভাবের কোন পরিবর্তন হয় না। তবে মালেক ওহাবের ইচ্ছে পূরণ না করলেও অন্যভাবে পড়াশোনা শুরু করে সে। খলিফার শিক্ষকদের কাছে ইংরেজী পড়া শিখতে থাকে আহমদ খলিল। অবাক ব্যাপার যে, খুব জলদিই ভালোভাবে পড়তে ও বুঝতে শিখে যায় সে। এখন যত পড়ে তত আকর্ষণ অনুভব করে সে পড়ার প্রতি। তার মনে হয়, এতে দিন ধরে এ জিনিসগুলোই তো সে জানতে চেয়েছিল। এ সময় হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবনী ছাপার অক্ষরে প্রথম পাঠ করে সে। পাঠ তো নয়, সে যেন গোগ্রাসে গিলে খাওয়া ! যত পড়ে ততই অভিভূত হয় আহমদ খলিল। চার খলিফা এবং অন্যান্য সাহাবার জীবনী পাঠ করে ভিন্নতর এক অনুভূতিতে তার হৃদয় ভরে ওঠে।
মহানবী (সঃ) এর সাহাবীদের জীবনের এবং অন্য আরো দু’টি ঘটনা আহমদ খলিলের মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে। যেমন মুসাব বিন ওমরের ব্যাপার। অত্যন্ত ধনী ঘরের সন্তান হিসেবেই বেড়ে উঠে ছিলেন মুসাব। মক্কায় সবচেয়ে ভলো পোশাক পরার জন্যে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। তার স্নেহান্ধ পিতা-মাতা সন্তানের জন্যে প্রয়োজনবোধে একশ’ দিরহাম দিয়ে পোশাক কিনতেও কার্পণ্য করতেন না। তাই ভোগবিলাসের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছিল মুসাবের জীবন। প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে মুসাবও ছিলেন একজন। কিন্তু, এ ব্যাপারে তার পিতা-মাতা কিছুই জানতেন না। ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পার মুসাবকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখলেন তারা। বাইরে বেরনো বন্ধ হয়ে যায় তার। একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন তিনি। হিজরতকারী মুসলিমদের দলে যোগ দিয়ে প্রথমে যান আবিসিনিয়া । সেখান থেকে ফিরে আসেন মদীনায়। একদিন নবী করিম (সঃ) দরবারে বসেছিলেন। মুসাব কোন কাজে তাঁর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তার পরনে ছিল অজস্র তালি মারা একখণ্ড কাপড় এবং তাই দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রেখেছিলেন তিনি। এর কিছু দিন পর ওহুদের যুদ্ধে মুসাব শহীদ হলেন। দেখা গেল, তার পরণের কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা পড়ে না। যখন মাথা ঢাকা হয় তখন পায়ের দিক নিরাবরণ হয়ে যায়। আবার পা ঢাকলে মাথা খোলা থেকে যায়। ব্যাপারটি মহানবী (সঃ) এর গোচরে আনা হলে তিনি নির্দেশ দিলেন— তার মাথা ঢাকো কাপড় দিয়ে এবং পায়ের দিক পাতা দিয়ে ঢেকে দাও।
একবার হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নেতৃত্বে তাবুকের যুদ্ধ চলছিল। এ যুদ্ধে জুলবিজাদাইন জ্বরে ইন্তেকাল করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পূর্ণ মর্যাদার সাথে তাকে দাফন করলেন। নিজে তার কবরে মাটি বিছিয়ে দিয়ে মোনাজাত করলেন । এই তরুণ যুবক খুব অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার চাচার নিষ্ঠুরতার ভয়ে দীর্ঘদিন তা গোপন রাখেন। পরে মক্কা বিজয়ের সময় হযরত যখন নগরীতে প্রবেশ করলেন তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে তাঁর কাছে ছুটে যান । মুসলিমদের সাথেই থাকার জন্যে আবেদন জানান তিনি। তার চাচা একথা জানতে পেরে আবদুল্লাহকে চিরকালের জন্যে ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়, এমন কি সম্পত্তিসহ তার সব কিছু কেড়ে নিয়ে ইসলাম গ্রহণের পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিলেন। কিন্তু তাতেও ফল না হওয়ায় পরণের কাপড়টুকুও খুলে নিলেন তিনি। নিরুপায়, ব্যথিতা জননী পুত্রের নগ্নদেহ ঢাকার জন্যে গোপনে একটি কম্বল দিয়ে গেলেন। সেটা গায়ে জড়িয়ে তাবুক অভিযানে যাত্রাকারী মুসলিম বাহিনীতে যোগ দিলেন তিনি। তাবুক যুদ্ধের মধ্যে আবদুল্লাহ হঠাৎ করেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করলেন। দাফনের কাজে রাত হয়ে গেল। হযরত বেলাল (রাঃ) আলো হাতে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং মহানবী (সঃ) নিজ হাতে তার লাশ কবরে নামিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে ইবনে মাসউদ চিৎকার করে উঠলেনঃ আহা ! আজ যদি আমি ইন্তেকাল করতাম এবং আমাকে যদি দাফন করা হত এ কবরে, তা হলে কি সৌভাগ্যই না আমার হত!
উম্মে আমারা বর্ণনা করেছেনঃ
ওহুদের যুদ্ধে আমাদের সাজ সারঞ্জাম ছিল খুবই দুর্বল। আমরা মাটিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছিলাম। পক্ষান্তরে কাফেরদের একটা শক্তিশালী অশ্বারোহী দল ছিল। যুদ্ধের সময় একজন অশ্বারোহী কুরাইশ আমাকে আক্রমণ করল। আমি আমার ঢাল দ্বারা তার তলোয়ারের আঘাত প্রতিহত করলাম এবং প্রতিঘাতে তার ঘোড়ার পিছনের পা কেটে ফেললাম। ঘোড়া এবং তার আরোহী ভূতলশায়ী হলো। সাথে সাথে আমি চিৎকার করে আমার ছেলেকে ডাকলাম সাহায্যের জন্যে। তারপর লোকটিকে হত্যা করলাম আমরা ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ঘটনাটি লক্ষ্য করছিলেন। তিনি বললেনঃ হে উম্মে আমারা! তোমাদের মত এমন হৃদয় আর কার আছে! আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! বেহেশতে আমি যেন আপনার সাথী হতে পারি এ দোয়া করবেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। তারপর থেকে আমি আর জীবনের প্রতি কোনদিন ভ্রূক্ষেপ করি নি।
আহমদ খলিল এ সব কাহিনী পড়ে ক্রমশঃই অভিভূত হতে থাকে। সে বেশ উচ্চস্বরে পড়ে যাতে তাঁবুর অন্যান্যরাও শুনতে পায়। কিন্তু সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, কেউই এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করতে চায়না। সবাই বলে, আজকের দিনে এসব গালগল্প ছাড়া আর কিছুই না। এমনকি তার আব্বাও অতীতের ব্যাপার ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করার জন্য তাকে তিরস্কার করতে থাকেন। তবে মালেক ওহাবের ব্যবহারে সে তেমন কিছু মনে করেনা। কিন্তু তার সমবয়সী ছেলেরা যখন এগুলোকে অবাস্তব বলে তাকে উপহাস করতে থাকে তখন ক্ষোভে দুঃখে বাকহারা হয়ে পড়ে আহমদ খলিল । তবে এর মধ্যে তার একটিই মাত্র সান্ত্বনা যে, আর যে যাই করুক বা বলুক- খলিফা কিন্তু গভীর মনোযোগ দিয়ে কাহিনীগুলো শোনে। তাছাড়া আরো কাহিনী পড়ে শোনানোর জন্যেও সে তাকে অনুরোধ জানায় ।