সপ্তম অঙ্কন :
শ্রীরাজর্ষি বসু বেতলা, পালাম্বা, বিহার,
বালীগঞ্জ প্লেস ২৬/১১/৮৭
প্রীতিভাজনেষু,
এই মাত্র চিঠি পেলাম । ভীষণই ব্যস্ত । আমার বয় ফ্রেন্ড এসেছে একমাসের ছুটিতে States-এর হুস্টন থেকে । এই একমাস চিঠি ছোট হবে। এবং অনিয়মিত । রাগ করলে আমি নিরুপায়।
বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম যে আপনার ছেলেমেয়ের জন্যে সোয়েটার বুনে পাঠাবো। এবং প্রথম দিকের চিঠিতেই আপনার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের কথা জানতেও চেয়েছিলাম । অথচ আপনিই ঐ প্রসঙ্গে কিছুমাত্রই লেখেননি আজ অবধি । তাই ভদ্রতার ও কুণ্ঠার কারণেই আর জানতেও চাইনি ।
আপনার সর্বকনিষ্ঠা বা কনিষ্ঠ সন্তানের জন্যে আমি একটা কিছু আগে বুনে পাঠাতে চাই । দয়া করে তার একটি ফোটো কি পাঠাবেন ? সাম্প্রতিক ফোটো ? আপনার সোয়েটার বানাবার কথা আপাতত ভাবছি না কারণ আপনি মানুষ মোটেই সুবিধের নন মশাই ! যে-মহিলা ভালোবেসে পুলওভার বুনে দিলেন তাঁর অমন নিন্দা যদি আপনি করতে পারেন আমার কাছে, বিহাইন্ড হার ব্যাক এবং বলাবাহুল্য অন্য দশজনেরও কাছে, তাহলে আমার বোনা পুলওভার সম্বন্ধেও যে করবেন না তারই বা কোন্ গ্যারান্টি আছে। তাছাড়া সোয়েটার তো হাওয়াতে বানানো যায় না। মাপ লাগে । আপনাকে এখানে আসতে হয় মাপ দিতে । নয় আমাকেই যেতে হয় । নইলে ওখানের অন্য কোনো মহিলাকেই বলুন যে আপনাকে বাহুলগ্না করে বুকের কোমরের বাহুর কব্জির এবং গলার মাপ নিয়ে আমাকে পাঠাতে। তাহলেও হবে। সেই দুর্ঘটনা কি শিগগির ঘটবে ? জানি না ।
আমার মনে হয় যে আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী । তাই এতবার তাঁর প্রসঙ্গ উত্থাপন করা সত্ত্বেও আপনি নীরবেই আছেন । সুন্দরী স্ত্রীদের স্বামীরা সচরাচর এ রকমই ব্যবহার করেন বলে শুনেছি । তবে তা অন্য পুরুষদেরই সঙ্গে । যাই হোক আমি আর এই বিষয়ে আপনাকে বিরক্ত করবো না। আপনার নীরবতার কারণ নিশ্চয়ই আছে । তবে আপনার কনিষ্ঠতম শিশুর একটি ফোটো পাঠাতে নিশ্চয়ই অসুবিধা নেই । ভালো থাকবেন ।
ইতি—ঋতি
পুনশ্চ এইমাত্র আপনার শুখা-মহুয়া এসে পৌঁছলো । ব্যবহারবিধি পুরোপুরি মানা হবে কিন্তু তারপরও যদি ফল না পাওয়া যায় তাহলে আপনার ঘোরতর বিপদ জানবেন । বাবা তো বলছিলেন, হাঁটুতে এখন শুধুই ব্যথা আছে। শুখা মহুয়া ঘষে ব্যথার সঙ্গে উপরি ঘা-টাও যোগ হবে ।
আমি তবু ইনসিস্ট করেছি। বলেছি, অরণ্যদেবের ওষুধ কি বৃথা হতে পারে ? মাও আমারই দলে । মুখ রাখবেন আমার, অরণ্যদেব।