যুগ-যুগান্তর ধরি’ মৌন মূক দাঁড়াইয়া তুমি
হে অম্লান গৌরবের তাজ !
কি কথা জানাও কারে ? নীরব ইঙ্গিতে অন্তরের
গোপন-প্রদেশে পুঞ্জীভূত লুপ্ত শত বরষের
করুণ কাহিনী যত আজ—
চাহ কি বুঝাতে কারে ? কিম্বা তুমি চিত্রিত স্বপন,
ঘিরে আছ বিশ্বের অঙ্গন ?
কলোৰ্ম্মিচঞ্চলা নীলা ধায় দূরে অনন্তের পানে
প্রতিবিম্ব বক্ষে ধরি’ ছলছল করুণার তানে
গাহি’ গান সারা নিশিদিন ।
দূরশ্রুত বংশীধ্বনিসম মধুগন্ধ বায়ু-স্রোতে
ভেসে আসে স্বপ্নবাণী বিস্মৃতির পরপার হ’তে
অতি মৃদু অৰ্দ্ধৰ্ম্ম ট ক্ষীণ ;—
সৌদামিনী-নৃত্যলীলা-সম ক্ষণস্থায়ী ; পুন হায় !
দীর্ঘশ্বাসে মিলাইয়া যায় ।
ভঙ্গুর এ অস্ফুট স্বপন সত্য ছিল কোন দিন,
সাক্ষী তুমি—শতাব্দীর ধ্যানমৌন হে নিত্য নবীন
গৌরবের মহিমার তাজ !
তাই বুঝি বেষ্টি’ তোমা মৰ্ম্মন্তুদ বিয়োগ-যাতনা,
অশ্রুমাখা করুণ সঙ্গীত এক অপূর্ব কামনা
যুগ-যুগ করিছে বিরাজ।
চরণ-চুম্বিনী নীলা যমুনার মৃদু কলধার
তাই বুঝি তুলে হাহাকার !
প্রস্তরে গঠিত কায়, চারুশিল্প মাত্র ভাস্করের
কে বলে তোমারে তাজ ? পুঞ্জীভূত অশ্রু প্রণয়ের ;
তুমি তাজ প্রেমের স্বরূপ ।
পঞ্জারের অস্থি সনে মিশাইয়া হৃদয়-শোণিত
গড়িল সম্রাট তোরে—প্রণয়ের শরীরী সঙ্গীত।
প্রেম নহে ভঙ্গুর অরূপ,
অব্যয় শাশ্বত প্রেম অমরার দীপ্তি-সমুজ্জ্বল,
ত্রিভুবনে শ্রেষ্ঠ কাম্যফল ৷
শতাব্দীর মহাসাক্ষী যুগ-স্মৃতি-পরিস্নাত
সৌধরূপী হে মূৰ্ত্ত প্রণয় !
হেরি তোরে কাঁদে প্রাণ, আজি তুই সমাধি-শ্মশান,
বেষ্টি’ তোরে ঘোরে নিত্য হতাশার করুণার গান ৷
সকলি পেয়েছে লয়,
তুই শুধু কালজয়ী ধ্বংস-বুকে শুভ্র দীপ্ত ভাল
গৌরবের অমর কঙ্কাল ।