
আবুল ফজল
আবুল ফজল (১৯০৩–১৯৮৩) ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক ও সমাজসচেতন বুদ্ধিজীবী। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই সাহিত্যিকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (১৯২৮) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ (১৯৪০) ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাগত জীবনে মসজিদের ইমামতি দিয়ে শুরু করলেও পরে শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪১ সালে কৃষ্ণনগর কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজে বদলি হয়ে ১৯৫৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি প্রগতিশীল চিন্তাধারার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ‘শিখাগোষ্ঠী’র সদস্য হিসেবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আবুল ফজল ছিলেন স্বদেশপ্রেমী ও অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার এক অগ্রণী সাহিত্যিক। তাঁর রচনায় সত্যনিষ্ঠা, মানবতা এবং সমাজকল্যাণের প্রবল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে চৌচির (১৯৩৪), মাটির পৃথিবী (১৯৪০), রাঙ্গা প্রভাত (১৯৫৭), রেখাচিত্র (১৯৬৬) এবং দুর্দিনের দিনলিপি (১৯৭২)।
তাঁর অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬) এবং নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮০) সহ বহু সম্মাননা লাভ করেন। সাহিত্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগ্রামে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ছিল প্রশংসনীয়। ১৯৮৩ সালের ৪ মে তিনি চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল ফজল বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যকে অগ্রগতির পথে পরিচালিত করার এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও পাঠককে প্রেরণা জোগায়।