
মওলানা ভাসানী
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০–১৯৭৬) ছিলেন এক অগ্নিঝরা নেতৃত্বের অধিকারী রাজনীতিক, যিনি রাজনীতির ময়দানে সবার চেয়ে বেশি কৃষক ও শ্রমিকের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম করে গেছেন। সিরাজগঞ্জের ধনপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই স্ব-শিক্ষিত নেতা বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মওলানা ভাসানী প্রথমে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়ে রাজনীতির পথে পা রাখেন, পরে কৃষকদের স্বার্থে ত্রিশের দশকে অসামরিক আন্দোলন গড়ে তুলেন। তাঁর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, আসাম এবং পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে ওঠে এক শক্তিশালী কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন।
মহান নেতা ছিলেন মাওলানা ভাসানী, যিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটালেও, দেশের প্রান্তিক জনগণের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও ন্যায়ের প্রতি অনমনীয় বিশ্বাস কখনও কমেনি। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে, মওলানা ভাসানী ছিলেন স্বাধীনতার অনবদ্য কণ্ঠস্বর। তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতির মঞ্চে ঢাকায় বহু সভা হয়েছে, আবার কখনও তাঁর শীতলগ্রামে সংগঠিত কৃষক সমাবেশে বিপ্লবের সুর বাজিয়েছেন। বামপন্থি আদর্শের প্রতি তাঁর বিশ্বাস এবং তাঁর চিন্তা-ভাবনা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে।
শেষ বয়সে সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজ পরিবর্তনে অবদান রেখে গেছেন। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সংগ্রামী জীবন আমাদের কাছে এক অমর কাহিনীর রূপে থেকে গেছে।