সুকুমার রায়, Sukumar Ray, proggapath, progga, bangla literature, প্রজ্ঞাপাঠ, বাংলা সাহিত্য

সুকুমার রায়

সুকুমার রায় (১৮৮৭–১৯২৩) বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা, যিনি শিশুসাহিত্যের জগতে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। তিনি শুধু ছড়াকার নন, ছিলেন নাট্যকার, গল্পকার, ব্যঙ্গকার, চিত্রকর, গীতিকার, সুরকার ও প্রযুক্তিনিপুণ এক শিল্পস্রষ্টা। জন্ম কলকাতায়, ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর; কিন্তু তাঁর আদি নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার মসুয়া গ্রামে।

সুকুমার রায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে অনার্সসহ বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯১১)। এরপর ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ’-এর মাধ্যমে বিলেতে যান ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য। ম্যাঞ্চেস্টার স্কুল অফ টেকনোলজিতে পড়াশোনার সময় তিনি পিতার উদ্ভাবিত হাফটোন পদ্ধতি সফলভাবে উপস্থাপন করে প্রযুক্তিগত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এই সময় তিনি “East and West Society”-তে “Spirit of Rabindranath” শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করে খ্যাতি অর্জন করেন এবং “The Quest” পত্রিকায় প্রবন্ধটি প্রকাশিত হলে বিলেতের বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। ফটোগ্রাফিতে অসামান্য দক্ষতার জন্য তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে Royal Photographic Society-র ফেলো (FRPS) নির্বাচিত হন।

১৯১৩ সালে দেশে ফিরে তিনি পিতার গড়া ইউ. রায় অ্যান্ড সন্স মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন এবং সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। সন্দেশের পাতায় তিনি কল্পনা, ব্যঙ্গ ও কৌতুকের মাধ্যমে এক স্বতন্ত্র সাহিত্যভাষা নির্মাণ করেন যা আজও পাঠকের হৃদয় জয় করে। বিলেত থাকাকালেও তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, গল্প ও চিত্র পাঠাতেন।

ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে শিল্প ও সাহিত্যের বহুমাত্রিক চর্চা শুরু হয়। তিনি গড়েছিলেন ‘ননসেন্স ক্লাব’, যার মুখপত্র ছিল সাড়ে-বত্রিশ-ভাজা। বিলেত থেকে ফিরে গড়েন ‘মানডে ক্লাব’, যা ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ, পাঠ ও ভোজনের কেন্দ্র। তিনি একবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে নাটকে অভিনয়ও করেন। স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর রচিত ও পরিবেশিত গান ছিল রাজনৈতিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম মূলত শিশু-কিশোর পাঠকের জন্য হলেও তাতে রস, বুদ্ধি, ব্যঙ্গ এবং সূক্ষ্ম সমাজচেতনার যে মিশ্রণ দেখা যায়, তা বাংলা সাহিত্যের পরিধিকে অভাবনীয়ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে— আবোল-তাবোল (১৯২৩), হ-য-ব-র-ল (১৯২৪), পাগলা দাশু (১৯৪০), বহুরূপী (১৯৪৪), খাইখাই (১৯৫০), অবাক জলপান, ঝালাপালা, শব্দকল্পদ্রুম প্রভৃতি। পাশাপাশি তিনি কিছু প্রবন্ধও রচনা করেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়, যা তাঁর চিন্তাশীল মনের পরিচয় বহন করে। ডায়েরি আকারে রচিত হেসোরামের ডাইরি তাঁর একটি অনন্য, অপ্রকাশিত রম্যরচনা।

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯২৩ সালে তিনি পরলোকগমন করেন, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান এক অমর অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। হাস্যরস, ব্যঙ্গ এবং বিমূর্ত কল্পনার যে বিশ্ব তিনি নির্মাণ করেছিলেন, তা আজও পাঠকের হৃদয়ে অম্লান। সুকুমার রায় বাংলা শিশুসাহিত্যের জগতে কেবল একজন লেখক নন, তিনি এক অপূর্ব কল্পলোকের স্রষ্টা।

  • ভাষার অত্যাচার

    by Proggapath

    হাতের কাছেই যাহা থাকে, যাহাকে লইয়া অহরহ কারবার করিতে হয়, তাহার যথার্থ মূল্য ও মর্যাদা সম্বন্ধে খুব একটা স্পষ্ট অনুভূতি আমাদের মধ্যে অনেক সময়েই দেখা যায় না । এই দেহটাকে …

    0 FacebookTwitterPinterestWhatsappTelegramCopy Link